নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
গত লোকসভা ভোটে প্রচারের মন্ত্র ছিল ‘অব কি বার, মোদী সরকার।’ দেখিয়েছিলেন ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন।
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পরে চার বছর হতে চলল। নরেন্দ্র মোদী এখন আর ‘অচ্ছে দিন’-এর কথা বলেন না। ‘নিউ ইন্ডিয়া’ বা নতুন ভারত নামে আরও রঙিন স্বপ্ন দেখান। যে ভারতে নাকি দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, বেকারত্ব, জাতপাত, দারিদ্র— কিছুই থাকবে না। সেটা অবশ্য এখনই নয়। ২০২২ সালে।
আপাতত ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে মোদীর স্লোগান কী হবে, বাজেটের আগে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এটাই তাঁর সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। রাজনীতিকরা মনে করছেন, মোদী কোন স্লোগানকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে যাবেন— এই বাজেটেই তার ইঙ্গিত মিলবে। বিজেপি নেতাদের অনেকের মতে, ‘বিকাশ’ বা উন্নয়নই প্রধান মন্ত্র হবে ভোটের প্রচারে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’-এর স্লোগানের কথা মোদী একাধিক বার বলেছেন। সেই মন্ত্রই নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে। তাতে এক দিকে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমে ধুয়ো দেওয়া হবে। আবার বাজেটে গ্রাম, গরিব চাষির কল্যাণে টাকা ঢেলে ‘জয় কিষাণ’ স্লোগানের মঞ্চও তৈরি করা হতে পারে। ২০১৬-র ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় ‘মিত্রোঁ’ বলে শুরু করে নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রসিকতা কম হয়নি। ইদানীং ‘মিত্রোঁ’ বলা ছেড়ে ‘ভাইয়োঁ অওর বহনোঁ’-তেই রয়েছেন মোদী। তাঁর সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য এখনও ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর কথা বলেন। কিন্তু মোদী জমানাতেই যে ভাবে সংখ্যালঘু, দলিতদের নিশানা করা হয়েছে, তাতে ‘সব কা সাথ’ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। মোদী এখন তাই প্রতি কথায় দলিত-পীড়িত-বঞ্চিত-শোষিতের অধিকারের কথা বলেন। তাঁদের জন্য সুশাসনের কথা বলেন। বাল গঙ্গাধর তিলকের ‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার’-কে নতুন মোড়কে ফেলে মোদী স্লোগান দিয়েছেন, ‘সু-রাজ আমার জন্মগত অধিকার’। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, ‘‘যে ভাবে গত তিন বছরে বাক্-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়েছে, কে কী খাবেন, কোন সিনেমা দেখবেন, সেখানেও হস্তক্ষেপ হচ্ছে এবং সব দেখেও প্রধানমন্ত্রী নীরব থেকেছেন— তার পরেও কি না সু-রাজের কথা ওঠে!’’
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে নিজেকে ‘প্রধান সেবক’ বলেছিলেন মোদী। কিন্তু ‘স্যুট-বুটের সরকার’ স্লোগানে সেই বেলুন চুপসে দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। ‘স্বচ্ছ ভারত’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’— একের পর এক নতুন নামকরণের প্রকল্প চালু করেছেন মোদী। কিছু নতুন, তবে বেশির ভাগই নতুন মোড়কে পুরনো প্রকল্প। সেই সব প্রকল্পের সাফল্য নিয়েও উঠেছে বড়সড় প্রশ্ন।
কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, মুখে ‘বিকাশের’ কথা বললেও ভোটের আগে মোদী ও বিজেপি একটাই মন্ত্র নেন। তা হল, ধর্মীয় মেরুকরণ, বিভেদ ও ঘৃণার রাজনীতি। বিজেপির আসল স্লোগান সেটাই হওয়া উচিত।