আর্থিক বৃদ্ধি থেকে নির্ধারণ করা হয় গড় বার্ষিক বৃদ্ধি। আর গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হিসেব অনুযায়ী অক্সফোর্ড ইকনমিক্সের একটি তালিকায় ২০১৯-২০৩৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল শহরের মধ্যে প্রথম দশটিতেই রয়েছে ভারতের একাধিক শহরের নাম।
উৎপাদন শিল্প, কৃষি উৎপাদন, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদির তথ্য রাজ্য দেয়। আবার বনসৃজন, পরিষেবা শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রেল, বন্দরের মতো শিল্পক্ষেত্রের বৃদ্ধির হিসেব দেয় কেন্দ্র। দুই হিসেব মিলিয়ে তৈরি হয় রাজ্যের জিডিপি। রাজ্য থেকেই হিসেব তৈরি হয় শহরের। জিডিপি ছাড়াও কর্মসংস্থান, বেতন, কর্মক্ষেত্র তৈরির প্রবণতা, গোটা পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে আর্থিক বৃদ্ধি।
অক্সফোর্ড গ্লোবাল সিটিজ অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান রিচার্ড হল্ট বলেন, গড়ে ৯ শতাংশেরও বেশি হারে বার্ষিক আর্থিক বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করবে সুরাত। হিরে উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই শহরটি। গড় বার্ষিক বৃদ্ধি সুরাতের ক্ষেত্রে ৯.১৭ শতাংশ।
এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা মিলে সারা বিশ্বের প্রায় ৩০০টি শহরকে নিয়ে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। এতে দ্বিতীয় স্থানে গড় আর্থিক বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে আগরার। আগরার ক্ষেত্রে এটি ৮.৫৮ শতাংশ।
বেঙ্গালুরু, অর্থাৎ টেক সিটিও পিছিয়ে নেই। প্রযুক্তি নগরীর ক্ষেত্রে গড় আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮.৫ শতাংশ।এই সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় দু’ দশক বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে প্রথমে থাকছে ভারতের শহরগুলি।
হায়দরাবাদের ক্ষেত্রে গড় আর্থিক বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করার কথা প্রায় ৮.৪৭ শতাংশ। সমীক্ষা বলছে, ২০২৭ সালের মধ্যে সুরাত, আগরা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ-সহ সবকটি এশীয় শহরগুলির মোট গড় জাতীয় উৎপাদন ছাপিয়ে যাওয়ার কথা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের প্রতিটি বড় মেট্রো শহরের জাতীয় উৎপাদনের গড়কে।
নাগপুরের ক্ষেত্রে এই গড় আর্থিক বৃদ্ধি গিয়ে দাঁড়াবে ৮.৪১ শতাংশে। এই তালিকায় নাগপুরের স্থান পাঁচ নম্বরে। সমীক্ষা অনুযায়ী, এশিয়ার সবকটি দেশের উন্নয়নশীল শহরের জাতীয় গড় বৃদ্ধি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের শহরগুলির মিলিত জাতীয় গড় বৃদ্ধির তুলনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কথা।
তিরুপ্পুরের ক্ষেত্রে এই গড় বার্ষিক বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮.৩৬ শতাংশ। তামিলনাড়ুর এই শহরে বাড়ছে কর্মসংস্থান। এখানকার সুতির কাপড়ের বিপুল চাহিদা বাড়ছে দেশের বাইরেও। তিন দশক ধরে ভারতের জিডিপির ক্ষেত্রে জরুরি ভূমিকা রয়েছে এই শহরের।
রাজকোটের ক্ষেত্রে গড় আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়ানোর কথা ৮.৩৩ শতাংশে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক আর্থিক সহায়তাও করেছে এই শহরের উন্নয়ন প্রকল্পে। অসংখ্য কারখানা থাকার কারণে রাজকোটের কর্মসংস্থানও যথেষ্ট উন্নত।
তিরুচিরাপল্লির ক্ষেত্রে গড় আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮.২৯ শতাংশ, বলছে সমীক্ষা। এই শহরের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি পার্কই রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
চেন্নাইয়ে ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ানোর কথা ৮.১৭ শতাংশে। চেন্নাইয়ের মতোই গড় আর্থিক বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করার কথা আফ্রিকার তানজানিয়ার দার এস সালাম শহরের। ইউরোপের ইয়েরেভানের আর্থিক বৃদ্ধির পরিমাণও দাঁড়াবে কাছাকাছি।
বিজয়ওয়াড়ায় ক্ষেত্রে গড় আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়ানোর কথা ৮.১৬ শতাংশে। এতগুলি শহর থাকলেও এই তালিকার ক্ষেত্রে কলকাতা বা দিল্লির নাম উল্লেখ নেই। বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলি নিয়েও একটি তালিকা প্রকাশ করছে অক্সফোর্ড। সে ক্ষেত্রে নিউ ইয়র্ক, টোকিও, লস অ্যাঞ্জেলেস, লন্ডন রয়েছে প্রথম চারে। তবে ২০১৯-২০৩৫ সালে এই তালিকায় বদল হতে পারে। আসতে পারে সাংহাই কিংবা বেজিংও।