—ফাইল চিত্র
লক্ষ্য অধরাই থেকে গেল।
নরেন্দ্র মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছিল, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্কদের সবাইকে দু’ডোজ় টিকা দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু হল না।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০.৫০ কোটি প্রাপ্তবয়স্কের দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। এখনও প্রায় ৩৪ কোটি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ় টিকা পাওয়া বাকি। প্রাপ্তবয়স্ক বা ১৮ বছরের বেশি বয়সি ৯৪ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি মানুষকে এখনও এক ডোজ় টিকাও দেওয়া হয়নি।
বিদায়ী বছরের শেষে, নতুন বছরের শুরুতে ফের কোভিডের সংক্রমণ মাথা চাড়া দিচ্ছে। তার সঙ্গে নতুন চিন্তা হয়ে উঠছে ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা একপ্রকার অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন মোদী সরকার প্রাপ্তবয়স্কদের সকলের টিকাকরণের কাজই শেষ করতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ২০২১-এর শেষে সবাইকে দু’ডোজ় টিকা দেওয়া হবে। এখনও সেই লক্ষ্য অনেক দূর। আরও একটি জুমলা ভেঙে পড়ল।”
কেন নতুন বছরে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকাকরণ শুরুর আগে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলের টিকাকরণ শেষ করা সম্ভব হল না?
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, টিকার অভাবই এর কারণ। খাতায়-কলমে যতই ১৪৫ কোটি ডোজ় টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে ঢাক পেটানো হোক, বাস্তব হল, টিকার জোগান যথেষ্ট নয়। জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিল, ১৮ বছরের বেশি বয়সি ৯৪ কোটি মানুষকে দু’ডোজ় টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩৫ কোটি ডোজ় টিকা সরকারের হাতে চলে আসবে। কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড ছাড়া আরও কোন কোন টিকা মিলবে, তারও সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছিল কেন্দ্র। বাস্তবে তার তিন ভাগের এক ভাগ টিকাই এখনও ছাড়পত্র পায়নি। ছাড়পত্র পেলেও পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হয়নি। ফলে মূলত কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ডের উপরে ভরসা করেই টিকাকরণ চলছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকারের ভুল নীতি এবং বারবার নীতি বদলের ফলেও টিকাকরণের গতি বাড়েনি। একবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে না। তার পরে বলেছেন, রাজ্যকে টিকা জোগাড় করতে হবে। তার পরে আবার সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেয়ে কেন্দ্রই সমস্ত টিকা কিনবে বলে ঘোষণা করেছেন।
ভারতে জানুয়ারি মাসে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। তার পরে বয়স্কদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এখনও সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, বয়স্কদের দু’ডোজ় টিকা দেওয়া হয়নি। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘২০২১-এর ৩১ ডিসেম্বর এসে চলেও গেল। জুমলা বা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি চলতে থাকল।’’ তাঁর হিসেবে, ৪৭.৯৫ কোটি ভারতীয়ের এখনও ৫৯.৪০ কোটি ডোজ় টিকা পাওয়া বাকি। এ ছাড়াও ২৫.৭০ কোটি বয়স্ক, করোনা-যোদ্ধা ও ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের জন্য ৩৫.৭০ কোটি ডোজ় দিতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখন যে গতিতে টিকাকরণ চলছে, তাতে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ শেষ হতেই আরও তিন মাস সময় লেগে যাবে। সরকারি সূত্রের অবশ্য পাল্টা দাবি, দু’টি নতুন টিকা, কোর্বেভ্যাক্স, কোভোভ্যাক্সকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে সে সব কবে মিলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আটটি টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে কোভিশিল্ড দিয়েই সিংহভাগ টিকাকরণ হয়েছে। প্রায় ১৪৫ কোটি ডোজ়ের মধ্যে ১২৮ কোটির বেশিই কোভিশিল্ড ডোজ়। কোভ্যাক্সিন ১৬ কোটির কাছাকাছি। রাশিয়ার স্পুটনিক দু’কোটিরও কম দেওয়া হয়েছে।