আন্দামান-নিকোবরের অধীন একটি দ্বীপ নর্থ সেন্টিনেল। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। কিন্তু তাও এই দ্বীপে আধুনিক সমাজের লেশমাত্রও পৌঁছতে পারেনি। এই দ্বীপে প্রবেশের অনুমতিও নেই কারও। কেন জানেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেন্টিনেল দ্বীপে থাকে সম্ভবত বিশ্বের শেষ উপজাতি যাঁদের উপরে এতটুকু ছাপ ফেলতে পারেনি আধুনিক সমাজ। সেন্টিনেল উপজাতিদের জীবনযাত্রা ঠিক কী রকম তা কারও জানা নেই। খুব কমই জানা গিয়েছে তাঁদের সম্পর্কে। কারণ তাঁরা নিজেদের রাজ্যে বাইরের জগতের নাক গলানো একেবারেই সহ্য করেন না।
নৌকা বা হেলিকপ্টার থেকে বছরের পর বছর নজর রেখে তাঁদের সম্পর্কে খুব সামান্য ধারণা করতে পেরেছেন নৃতত্ত্ববিদরা। জানা গিয়েছে, সর্বাধিক ৪০০ জন বাসিন্দা রয়েছেন এখানে। তাঁরা আগুনের ব্যবহারও জানেন না। শেখেননি চাষাবাদও। ৬০ হাজার বছর ধরে তাঁরা এখানেই রয়েছেন।
বিশ্বের অন্যান্য যে সমস্ত উপজাতি আছে, তাঁদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সেন্টিনেলরা। এঁরা একে অপরের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেন, তা তাঁদের সবচেয়ে কাছের উপজাতির পক্ষেও বোঝা অসম্ভব। মনে করা হয়, এই আদিম মানুষেরা আফ্রিকা থেকে এসেছিলেন এই দ্বীপে।
আধুনিক সমাজের সঙ্গে এঁদের যোগ স্থাপনের চেষ্টা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। তার আভাস পাওয়া যায়, মার্কোপোলোর একটি লেখায় এই দ্বীপের উল্লেখ থেকে। (যদিও আদৌ তিনি ওই দ্বীপে নেমেছিলেন কি না তা নিয়ে ধন্দ আছে ইতিহাসবিদদের।)
১৮৮০ সালে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এম ভি পোর্টম্যানের নেতৃত্বে একটি দল ওই দ্বীপে যান। কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনের বদলে তাঁরা উপজাতিদের এক প্রৌঢ় দম্পতি এবং চার শিশুকে তুলে নিয়ে আসেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাঁদের মেলবন্ধন।
কিন্তু আধুনিক সমাজে মানাতে না পেরে রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যান তাঁরা। এই ঘটনার পর আধুনিক সমাজের প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেন্টিনেলরা।
১৯৬৭ সালে থেকে ভারত সরকার যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে। ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদ ত্রিলোকনাথ পণ্ডিতই প্রথম যিনি ১৯৯১ সালের ৪ জানুয়ারি আন্দামান-নিকোবরের এই দ্বীপে গিয়ে সেন্টিনেলদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন।
কিন্তু সেই চেষ্টা সার্বিকভাবে সফল হয়নি বলা যায়। কারণ এই চেষ্টার পরও ওই উপজাতিরা আধুনিক মানুষকে তাঁদের রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেননি। বারবারই তাঁদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে আধুনিক মানুষকে। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
২০০৪ সালে সুনামির পর হেলিকপ্টারে উত্তর সেন্টিনেল আইল্যান্ডে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিল ভারত সরকার। তখনও ত্রাণ নেওয়ার বদলে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে অতর্কিতে পাল্টা আক্রমণ চালান তাঁরা। অবশেষে তাঁদের বিরক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। ওই দ্বীপ এবং তার চারপাশে ৩ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সীমানা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।