Rath Yatra

রথের রোজনামচা

রথযাত্রার উৎসবে কবে, কখন কী কী ঘটবে পুরীর শ্রীমন্দিরে, জানাচ্ছেন ঋজু বসু। রথযাত্রায় কোনও আচারেরই নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু অনুমান করা যায়, কখন কী কী হবে!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ১০:০৬
Share:

১৩ জুলাই

Advertisement

নবযৌবন উৎসব

স্নানযাত্রার পরে ফের মন্দিরে প্রভুর আবির্ভাব এই সকালে। বিশেষ টিকিটে এবং দিনের নির্দিষ্ট সময়ে একেবারে কাছ থেকে গর্ভগৃহে ঢুকে জগন্নাথ-দর্শনের বন্দোবস্ত হয়েছে। এই দর্শন-পর্ব চলবে সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এর পরে দিনভর নাটমন্দিরে কিছুটা দূর থেকে ভক্তেরা দর্শন পাবেন।

Advertisement

১৪ জুলাই

গুন্ডিচা যাত্রা

শ্রী মন্দির থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচার মন্দিরে যাবেন জগন্নাথ-বলভদ্র-সুভদ্রা। ভক্তের চোখে, এ হল শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা থেকে ব্রজে ফেরার রূপক। বিশেষ দিনে সকাল থেকেই মন্দিরে নানা আচার-অনুষ্ঠান।

১৪ জুলাই, সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা।

পাহুন্ডি বিজে

সংস্কৃত ‘পাদগুন্ঠন’ থেকে এসেছে ওড়িয়া পাহুন্ডি শব্দটি। সুভদ্রা-বলরাম-জগন্নাথ— একে একে টুকটুক করে দয়িতাপতি পান্ডাদের কোলে কোলে গর্ভগৃহের রত্নসিংহাসন থেকে রথে গিয়ে উঠবেন।

১৪ জুলাই, বেলা ১২টা থেকে বিকেল তিনটে।

ছেরা পহরা

রথে ওঠার পরে সাধারণত এক-এক করে ভিআইপি-রা এসে প্রভুকে দর্শন করে যান। মুখ্যমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, পুরীর শঙ্করচার্য প্রমুখ মান্যগণ্যদের দর্শন হলে আসেন পুরীর গজপতি মহারাজ। তিনি সোনার ঝাড়ু দিয়ে প্রভুর রথের পথ পরিষ্কার করেন। এর পরেই রথের রশিতে টান পড়ে।

১৪ জুলাই, বিকেল তিনটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা

যাত্রারম্ভ

প্রথম বলভদ্রের তালধ্বজ চলতে শুরু করে। এর পরে সুভদ্রার পদ্মধ্বজ এবং সব শেষে জগন্নাথের নন্দীঘোষের পথ চলা শুরু। সন্ধের পরে কিন্তু রথ চলবে না। পথের মাঝেই রথ থেমে যাবে। সাধারণত, জগন্নাথের রথের গুন্ডিচা পৌছতে পরের দিন সকাল হয়ে যায়।

(তবে রথযাত্রায় কোনও আচারেরই নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু অনুমান করা যায়, কখন কী কী হবে! সেবায়েতরা বলেন, প্রভুর যখন যা ইচ্ছা, তখনই সেটাই হবে।)

১৮ জুলাই

হেরা পঞ্চমী

গুন্ডিচা যাত্রার পাঁচ দিনের মধ্যে হেরা পঞ্চমী। এই দিন জগন্নাথের স্ত্রী লক্ষ্মী শ্রী মন্দির থেকে পাল্কিতে করে গুন্ডিচায় বরের খোঁজে আসেন। তবে প্রভুর ছুটি কাটানোর এই অবসরে তাঁর স্ত্রীর স্বামী-সন্দর্শনের সৌভাগ্য ঘটে না। দূর থেকেই গুন্ডিয়ায় প্রভুকে দর্শন করে ক্ষান্ত দিতে হয় লক্ষ্মীকে। রথের কাছ থেকে মন্দিরের সামনে আরতি সম্পন্ন করেন লক্ষ্মীদেবী। তারপরে রাগের চোটে রথের একখান কাঠ ভেঙে শ্রী মন্দিরে ফিরে যান জগন্নাথজায়া।

২১ জুলাই

সন্ধ্যা দর্শন

উল্টোরথের আগের সন্ধ্যায় গুন্ডিচায় এই দর্শনের না কি বিপুল পুণ্যফল। জগন্নাথ-ভক্তেরা মানেন, নীলাচল বা পুরীর মূল মন্দিরে পাঁচ বার জগন্নাথ দর্শনের পুণ্যফলের সমান পুণ্য সঞ্চয় হয়, একটি বার সন্ধ্যা দর্শনে প্রভুকে দেখার সুযোগ পেলে।

২২ জুলাই

বাহুড়া যাত্রা (উল্টোরথ)

রথযাত্রার মতোই উল্টোরথের আচার অনুষ্ঠানগুলিও মোটামুটি এক। তবে জগন্নাথকে ফেরার পথে গুন্ডিচার কাছেই মাসুমা মন্দিরে একবারটি থামতে হয়। এই হল পুরীর জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’। সেখানে জগন্নাথদেব আটার তৈরি পোড়া পিঠা খান। কেউ কেউ বলেন, এই মাসিমা আদতে দেবকীর প্রতিরূপ।

২৩ জুলাই

সোনাবেশ

শ্রী মন্দিরের সামনে পৌঁছে রথেই জগন্নাথদেব সুনাবেশ বা রাজবেশ ধারণ করেন। তখন তাঁর চোখের পাতা থেকে পায়ের আঙুল সোনার গয়নায় ভরপুর। রত্নভাণ্ডারে রাখা প্রভুর বেশিরভাগ সোনার গয়নাই প্রভু অঙ্গে ধারণ করেন।

২৪ জুলাই

অধরপানা

মাটির তিনটি পেল্লায় ড্রামের মতো পাত্র রাখা হয় রথে আসীন বিগ্রহের সামনে। সুভদ্রা, বলরাম, জগন্নাথ— তিন জনের সামনেই তিনটি করে ড্রাম। মনে করা হয়, কানা উঁচু বাসনটি প্রভুর ওষ্ঠস্পর্শ করেছে। ভক্তের বিশ্বাস, এই ড্রামে দই-ঘোলের পবিত্র পানীয় চুমুক দিয়ে খান ঈশ্বর। এই পানীয় কিন্তু প্রসাদ হয়ে ভক্তদের কাছে যাবে না। রথরক্ষক বিভিন্ন পার্শ্বদেবতারা এই পানীয় আস্বাদ করেন। তাঁদের সবার উদ্দেশে ধন্যবাদসূচক এই অধরপানার অনুষ্ঠান।

২৫ জুলাই

নীলাদ্রি বিজে

এ বার শ্রী মন্দিরে তাঁর রত্নসিংহাসনে ফিরবেন জগন্নাথদেব। তবে রথে ওঠার আগে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে এক প্রস্থ ঝগড়া হবে তাঁর। লক্ষ্মীদেবীর প্রতিনিধি সেবায়েতদের সঙ্গে জগন্নাথদেবের প্রতিনিধি দয়িতাপতিদের তর্কাতর্কি চলবে। শেষটা রসগোল্লা খাইয়ে লক্ষ্মীর মানভঞ্জন করে তবে মন্দিরে ঢোকার সুযোগ পাবেন জগন্নাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement