মেয়ে জাকিয়ার সঙ্গে কুতুবুদ্দিন।
মাস দেড়েক আগের কথা। ৩ এপ্রিল ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর জনসভা। সেই সময়ে কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়ি ছিলেন কুতুবুদ্দিন নাসিরুদ্দিন আনসারি—গুজরাত দাঙ্গার সময়ে দু’হাত জড়ো করে প্রাণ ভিক্ষা করা সেই মুখ। কিন্তু কথা বলার জন্য রাজি করানো যায়নি।
বছর ছেচল্লিশের মানুষটি তখন বলেছিলেন, ‘‘প্লিজ, ভুলে যান আমাকে। রাজনৈতিক দলগুলি আমাকে না-জানিয়েই নিজেদের সুবিধার জন্য আমাকে ব্যবহার করে ফেলে। এ আমি চাই না।’’
সেই কুতুবুদ্দিন ৩০ মে, মোদী সরকারের শপথ নেওয়ার সকালে, ফোন করলেন নিজেই। বললেন, ‘‘এ বার সকলের সামনেই কিছু বলতে চাই। মোদীজি আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হোন, এটাই সকলের রায়। আমিও খুশি। আমিও এই দেশের ছোট্ট অংশ। শুধু চাই, আমি যেমন জীবনের অনেকটা সময় আতঙ্কে কাটিয়েছি, আমার ছেলেমেয়ে রুকাইয়া, জিশান, জাকিয়াদের যেন তেমন ভাবে কাটাতে না-হয়। মোদীজির প্রধানমন্ত্রিত্বে ওরা যেন খোলা হাওয়ায় প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে।’’
আরও পড়ুন: বাদ গত বারের অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, আরও যে মন্ত্রীরা জায়গা পেলেন না এ বার
কেন তিনি ভয়ে ছিলেন? কিছুটা থমকে গিয়ে কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘‘ভিন্ন ধর্মের লোকেরা মিলেমিশেই থাকতে চান, কিন্তু কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে মাঝখানে ঢুকে পড়ে বিরোধ তৈরি করে। মোদীজি যেন তাদের সরিয়ে দেন। উনি যদি আমাদের মাথায় হাত রেখে দৃষ্টান্ত তৈরি করেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। নীতিনির্ধারকদের দেখেই তো নীচের তলার লোকেরা শেখে।’’
কলকাতায় মোদীর সভার সময়ে তিনি কেন সামনে আসতে চাননি? কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘‘আমি রাজনৈতিক বোড়ে হতে চাই না। কাছের লোকেরাও আমাকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। তবে আজ মনে হল কিছু বলি। আমার সেই কান্নার ছবি দেখে ছোট মেয়ে জানতে চায়, কী হয়েছিল। আমি ওকে বলি, বড় হয়ে বুঝতে পারবে। আমি ওদের জন্য নিশ্চিন্ত জীবন চাই।’’
আমদাবাদ স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রহমতনগরে সোন কি চাল-এ কুতুবুদ্দিনের বাড়ি। সেখানে জামাকাপড় তৈরির কাজ করেন। সাহায্য করেন স্ত্রী তাহেরা। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমদাবাদে দাঙ্গা শুরুর পর জনতা ঘিরে ফেলেছিল তাঁর বাড়ি। র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স তাঁদের উদ্ধার করে। তার পর বছরখানেক ছিলেন কলকাতার তিলজলায়। এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে তাঁকে দেখাও গিয়েছে কেরলে, বামপন্থীদের প্রচারসভায়। কুতুব বলেন, ‘‘লোকে ভাবে, আমি বামপন্থীদের দলে নাম লিখিয়েছি। তা নয়। ওঁরা সেই সময়ে আমাকে বাঁচতে সাহায্য করেছিলেন। কলকাতায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। ওঁদের কাছে আমি ঋণী। কলকাতার কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।’’
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোট-সাফল্যের কথা শুনেছেন কুতুব। বললেন, ‘‘এটা জনাদেশ। মাথা পেতে নিতে হবে। তবে নোটবন্দিতে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীর খুব কষ্ট হয়েছে। আমি চাই, মোদীজি বক্তৃতায় যে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর কথা বলেন, তা কাজে করে দেখান। তা হলে সকলেরই মঙ্গল।’’