Constitution of India

সংবিধানের নতুন সংস্করণে কেন নেই নন্দলাল বসুর আঁকা ছবি, সংসদে প্রশ্ন বিজেপির

নন্দলাল বসু চিত্রিত সংবিধান হল ভারতীয় সংবিধানের আদি সংস্করণ। পরবর্তী কালে সংবিধানের আরও সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ছবি-অলঙ্করণ নেই, আছে সংবিধানের মূল ভাষ্য।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:২৫
Share:
নন্দলাল বসু।

নন্দলাল বসু। ছবি আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

ভারতীয় সংবিধানের নতুন যে সংস্করণ এখন পাওয়া যায়, তাতে নন্দলাল বসুর আঁকা ২২টি মিনিয়েচার ছবি নেই। মঙ্গলবার রাজ্যসভার জ়িরো আওয়ারে বিষয়টি উত্থাপন করেন বিজেপি সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়াল। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সংবিধান তার আদি রূপেই প্রচারিত হওয়া উচিত। সংসদ অনুমোদিত সংশোধনী ছাড়া আর কোনও কিছুই তার সঙ্গে জোড়া বা তার থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। সরকার যেন এ ব্যাপারে সক্রিয় হয় এবং পদক্ষেপ করে।

নন্দলাল বসু চিত্রিত সংবিধান হল ভারতীয় সংবিধানের আদি সংস্করণ। পরবর্তী কালে সংবিধানের আরও সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ছবি-অলঙ্করণ নেই, আছে সংবিধানের মূল ভাষ্য। সংসদে এর আগের অধিবেশনে বি আর অম্বেডকরের নাম নেওয়াটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে বড়সড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অম্বেডকর এবং ভারতীয় সংবিধানের প্রতি অবমাননার অভিযোগ তুলে সুর চড়িয়েছিল বিরোধী শিবির। শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে সংবিধান না মানা এবং সংবিধান ধ্বংস করতে চাওয়ার অভিযোগ এমনিতেও লাগাতার তুলে এসেছে তারা। অমিতের মন্তব্য তারই সিলমোহর বলে সরব হন বিরোধীরা। এ বার বিজেপির তরফেই নন্দলালের ছবিকে হাতিয়ার করে পরোক্ষে কংগ্রেসের প্রতি সংবিধান অবমাননার অভিযোগ তোলা হল। ‘অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক’ বলে দাবি করে কংগ্রেস সাংসদরা আজ কিছু সময় রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।

সংবিধান থেকে বাদ গিয়েছে এই মিনিয়েচার— সিন্ধু সভ্যতার সিল।

সংবিধান থেকে বাদ গিয়েছে এই মিনিয়েচার— সিন্ধু সভ্যতার সিল।

সাংসদ রাধামোহন ঠারেঠোরে কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেই প্রসঙ্গটি সভায় উত্থাপন করেন। রাধামোহনের অভিযোগ, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি যে সংবিধান গৃহীত হয়েছিল, পরবর্তী কালে তার থেকে বাদ গিয়েছে নন্দলালের আঁকা ভারতীয় সভ্যতার অভিজ্ঞান সংক্রান্ত ২২টি মিনিয়েচার— সিন্ধু সভ্যতার সিল, রামচন্দ্র, বুদ্ধ, মহাবীর, কৃষ্ণার্জুন, বিক্রমাদিত্য, লক্ষ্মীবাই, শিবাজি এবং অন্যান্য। রাধামোহনের কথায়, ‘‘এখন কোনও নাগরিক সংবিধান কিনতে গেলে যে সংস্করণটি পাবেন, সেটি সংবিধানের আদিরূপ নয়। কখন কী কারণে জানি না, সংবিধানের বহু অংশ অসাংবিধানিক ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি, সংবিধানের দাঁড়-কমা বদলাতে গেলেও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে সংবিধান সংশোধনী আনতে হয়।’’ ধনখড় তার পরে বলেন, ‘‘কোনও রকম সংশয়ের অবকাশ নেই। আমি নির্দিষ্ট ভাবে বলছি, সংবিধানপ্রণেতারা সই করে নন্দলালের ছবি সম্বলিত যে সংবিধান গ্রহণ করেছিলেন, সেটাই অকৃত্রিম। পরবর্তী কালে যে সব সংশোধনী এসেছে, সেগুলো এর সঙ্গে জোড়া হতে পারে। কিন্তু বিচারবিভাগ বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান দ্বারা অন্য কোনও পরিবর্তন এই কক্ষে গ্রহণীয় নয়। সরকার দেখুক, অকৃত্রিম সংবিধানই যাতে প্রচার পায়। এর অন্যথা হলে সরকারের উচিত কড়াপদক্ষেপ করা।’’

কংগ্রেসের তরফে অবশ্য বিষয়টিকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিতর্ক তৈরির চেষ্টা বলে দাবি করা হয়। মল্লিকার্জুন খড়্গে অভিযোগ করেন, এতে অম্বেডকরের অবমাননাই হচ্ছে। তাঁর কথার উত্তরে মুখ খোলেন রাজ্যসভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নড্ডা। তিনিও ‘উধাও ছবি’র বিষয়টিকে গুরুতর বলে আখ্যা দেন। তাঁর হাতে সংবিধানের একটি আদি সংস্করণ তুলে দেওয়া হলে তিনি সভাকক্ষে উপস্থিত সকলকে ছবিগুলি দেখান। খড়্গের অম্বেডকর-মন্তব্য যাতে নথিভুক্ত করা না হয়, তার জন্য ধনখড়কে অনুরোধ করেন তিনি। এই সময়ে মুখ খোলেন তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েন। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধানের যে ডিজিটাল কপি দেওয়া হয়েছে সাংসদদের, তাতেও মিনিয়েচারগুলি নেই। খড়্গে প্রশ্ন করেন, সংসদের পক্ষ থেকে সংবিধানের যে সংস্করণ সাংসদদের হাতে দেওয়া হয়েছে, তাতে ছবিগুলো আছে কি না। কিন্তু তাঁকে আর কিছু বলতে দেওয়া হয়নি। কংগ্রেস সাংসদেরা এর পরেই ওয়াকআউট করেন। ধনখড় তাতে বলেন, ‘‘আমি বিমূঢ় এবং বিস্মিত। বিরোধী দলনেতা কেন বেরিয়ে গেলেন, তার কোনও যুক্তি পেলাম না। এটা তো অম্বেডকরের প্রতি সরাসরি অসম্মান!’’

খড়্গে পরে এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘সংবিধানের আদি চেহারায় নন্দলালের মিনিয়েচার ছিল। গান্ধীর অনুরোধে তিনি এঁকেছিলেন...। প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদার ক্যালিগ্রাফি ছিল...। আমজনতার সুবিধার জন্য পরে যখন সংবিধান ছাপা হয়েছে ক্যালিগ্রাফি আর ছবি ছাড়া ছাপা হয়েছে, সংবিধানের বক্তব্যের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে এই ধারা অনুসৃত হয়ে এসেছে।মোদী সরকার কার্যক্ষেত্রে এক দশকের বেশি সময় ধরে সংবিধানের প্রতিটি নীতি উল্লঙ্ঘন করে চলেছে।’’ অমিত শাহের মন্তব্যের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন