তুষারধসের জেরে বন্যার কবলে জোশীমঠ । নিজস্ব চিত্র
উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে হিমবাহ বিপর্যয়ের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের ‘মৃত’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি হড়পা বানে সেখানে ২০৪ জন মানুষ নিখোঁজ হয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬৯ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১৩৫ জনকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে তাঁর পরিবার পরিজনকে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতেই এই পদক্ষেপ। রাজ্য পুলিশের এক জন শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, এর পরেও নিঁখোজ ব্যক্তিদের খোঁজার কাজ থেমে থাকবে না।
উত্তরাখণ্ডে নিখোঁজ পশ্চিমবঙ্গের ছয় ঠিকা শ্রমিকের হদিস আজ পর্যন্ত মেলেনি। ওই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের ‘মৃত’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে ঠিকই। তবে হাল ছাড়তে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ থেকে চামোলিতে কাজ করতে যাওয়া নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিজনেরা। নিখোঁজেরা হলেন, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের লক্ষ্যা গ্রামের দুই ভাই লালু জানা (৩০) ও বুলু জানা (২৭), চকদ্বারিবেড়িয়া গ্রামের সুদীপ গুড়িয়া (২৭),পুরুলিয়ার আড়শার বাগানডি গ্রামের শুভঙ্কর তন্তুবায় (২১) ও অশ্বিনী তন্তুবায় (২৫), মালদহের ইংরেজবাজার থানার ভগবানপুরের অনেশ শেখ (৪২)। উত্তরাখণ্ডে গিয়ে ইতিমধ্যে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিজেদের নমুনা দিয়ে এসেছেন তাঁদের পরিজনেরা। লালু ও বুলুর ছোট ভাই রামকৃষ্ণ জানা এবং সুদীপের দাদা প্রদীপ গুড়িয়া বলেন, ‘‘যত ক্ষণ না মৃতের তালিকায় নাম রয়েছে বলে খবর পাচ্ছি, তত ক্ষণ আশায় থাকব।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের পরে উত্তরাখণ্ড সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ চামোলির বিপর্যয়ে নিখোঁজদের মৃত ঘোষণা করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব অমিত নেগির দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে ১৯৬৯ সালের জন্ম ও মৃত্যু নথিভুক্তিকরণ আইনের উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয়দের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের তিন ভাগে ভাগ করা হবে। এক, ওই এলাকার যে বাসিন্দাদের খোঁজ মিলছে না। দুই, উত্তরাখণ্ডের অন্য জেলাগুলির যে বাসিন্দারা দুর্ঘটনার দিনে চামোলিতে উপস্থিত ছিলেন এবং ওই ঘটনার পর থেকে যাঁদের খোঁজ মিলছে না। তিন, অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যটক ও অন্য কাজে আসা কেউ, যিনি নিখোঁজ হয়েছেন। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য দিয়ে পরিবারের সদস্যদের হলফনামা জমা করতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে। তিনি উপযুক্ত তদন্ত করে ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। এর ফলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কাজ সহজ হবে। উত্তরাখণ্ড পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের নামে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে এক মাস লেগে যেতে পারে। তবে উদ্ধারকাজ চলবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। চামোলির বিপর্যয়ের পরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলির ১১০ জনের ডিএনএ নমুনা এবং ৮৬ টি মৃতদেহ বা দেহাংশ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য দেহরাদূনে পাঠানো হয়েছে।