গোপালচন্দ্র মিত্র। নিজস্ব চিত্র
জগন্নাথের তা-ও মনটা নরম! লোকনাথ চটলে নাকি রক্ষে নেই!
তাই রত্নভাণ্ডার দর্শনের আগে বিগ্রহ স্পর্শ করে তিনি যে শপথ নিয়েছিলেন, তার খেলাপ করবেন না গোপালচন্দ্র মিত্র। জগন্নাথের ৮০০ বছরের সঞ্চিত ধনসম্পদের রক্ষাকর্তা, প্রলয়রূপী শিবের স্মারক এই লোকনাথ। তাঁকে বিলক্ষণ সমঝে চলেন, পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগ (আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) নিযুক্ত অশীতিপর ইঞ্জিনিয়ার গোপালবাবু। রত্নভাণ্ডার নিয়ে তাই স্পিকটি নট! কিন্তু দ্বাদশ শতকীয় মন্দিরের সুরক্ষার স্বার্থে কিছু কথা না-বলে পারছেন না তিনি।
বর্ধমানের মেমারির কাছে শিকড় থাকলেও এই ‘মিত্তির’রা ৪০০ বছর ধরে ওড়িশাবাসী। পুরীতে বসবাস ঠাকুরদার আমল থেকে। রত্নভাণ্ডারের চাবি বা ধনসম্পদের হালহকিকত নিয়ে এখন ভাবতে নারাজ এই মন্দির সংরক্ষণ বিশারদ। ‘‘ও-সব জগন্নাথই রক্ষা করবেন! কিন্তু রত্নভাণ্ডার সংস্কারের পরিকল্পনা না-ছকলে গোটা স্থাপত্যটির জন্য দুশ্চিন্তা থাকছে!’’ বৃহস্পতিবার সকালে ভুবনেশ্বরের শহিদনগরের বাড়িতে বসে বলছিলেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশে রত্নভাণ্ডারের অবস্থা খতিয়ে দেখার দলে গোপালবাবুকেও থাকতে হয়েছিল। এ দিন জানালেন, ওড়িশা সরকারকে তাঁর লিখিত সুপারিশ: রথযাত্রার সময়ে জগন্নাথ মাসির বাড়ি গেলে রত্নভাণ্ডার খুলে স্যাঁতসেতে ফাটল-ধরা দেওয়াল জরিপ করা হোক।।
নিজেও জগন্নাথ-অন্ত-প্রাণ! সে-দিন রীতিমাফিক শুদ্ধ শরীরে গামছা পরে রত্নভাণ্ডার পরিদর্শনের সময়ে অন্ধকারে পা একটু কেটে গিয়েছিল। এক ফোঁটা রক্ত পড়ার আগেই মন্দির থেকে প্রায় দৌড়ে জগমোহন পেরিয়ে বেরিয়ে আসেন! বছর দুয়েক আগে নরেন্দ্র মোদীর জগন্নাথ-দর্শনের পরে জগমোহন-সংস্কার নিয়ে এএসআই-এর ভাবগতিক ভাল ঠেকছিল না ‘মিত্রবাবু’র! জগন্নাথ মন্দির সংস্কার-সংক্রান্ত টেকনিক্যাল টিম থেকে সটান ইস্তফা দেন। পীড়াপীড়ি করে ফেরানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘জগন্নাথ নিয়ে হেলাফেলা দেখতে পারি না! আবার ওঁকে ছেড়েও থাকা মুশকিল।’’
চাবি নিয়ে পুরীর গজপতি মহারাজা জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের চাবি হারানোর দায় নিতে নারাজ। বৃহস্পতিবার একটি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘চাবি হারিয়েছে সরকারি ট্রেজারি থেকে। আমার কাছে চাবি ঠিকই আছে।’’ প্রসঙ্গত, কোনও কোনও মহল থেকে রাজাকে দোষারোপ করা হচ্ছিল।