Farmers Protest

কৃষক বিক্ষোভে হরিয়ানা নিয়ে চিন্তায় বিজেপি

ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনে নামার আগে পঞ্জাবে নতুন করে ঝাঁপানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৮
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

কৃষক বিক্ষোভে পঞ্জাবের চেয়ে হরিয়ানায় রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। লোকসভার পরেই হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। কৃষক বিক্ষোভের আবহে টানা তৃতীয় বার ওই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় নেতৃত্ব।

Advertisement

ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনে নামার আগে পঞ্জাবে নতুন করে ঝাঁপানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো প্রথম কৃষক আন্দোলনের সময়ে এনডিএ ছেড়ে চলে যাওয়া শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গেও জোটের আলোচনা শুরু করে বিজেপি। প্রাথমিক ভাবে স্থির ছিল, রাম মন্দিরের নির্মাণকে কেন্দ্র করে, দলীয় হিন্দু নেতা সুনীল জাখরকে সামনে রেখে পঞ্জাবে হিন্দু ভোটের মেরুকরণে নামবে দল। অন্য দিকে, শিখ ভোটকে পাশে পেতে ফের শিরোমণি অকালি দলের উপরে ভরসা রাখবেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো অকালি নেতৃত্বের সঙ্গে জোটের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিল দল। কিন্তু ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে কিসান মজদুর মোর্চার আন্দোলন শুরু হওয়ায় ভেস্তে যায় জোট-আলোচনা। কৃষকদের ওই আন্দোলন কেন্দ্রবিরোধী হওয়ায় লোকসভার আগে দূরত্ব রচনার কৌশল নেয় অকালি শিবিরও।

গত লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাবের তেরোটি লোকসভা আসনের মধ্যে দু’টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন সানি দেওল। যিনি সম্ভবত এ বার লড়ছেন না। পরিবর্তে ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহ ওই কেন্দ্র থেকে লড়তে চলেছেন বলে শোনা গিয়েছে। সূত্রের মতে, পঞ্জাবে এ যাত্রায় যুবরাজের মতো বড় মাপের ব্যক্তিত্বকে দাঁড় করিয়ে একাধিক আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে দল।

Advertisement

তবে বিজেপির আশঙ্কা অন্যত্র। গত লোকসভায় পঞ্জাবে দু’টি আসনে জিতেছিল দল। এ বারও কম-বেশি ওই সংখ্যক আসন পঞ্জাবে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে কৃষক আন্দোলনের হাত থেকে দিল্লিকে বাঁচাতে হরিয়ানাকে ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ওই রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্ক পাল্টানোর আশঙ্কা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

হরিয়ানায় লোকসভার পরেই বিধানসভা নির্বাচন। এক দিকে গত দু’বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে সব ক’টি আসনে জেতার চাপ। অন্য দিকে, ওই রাজ্যে টানা তৃতীয় বার নিজের আসন ধরে রাখতে ময়দানে নামছেন মনোহরলাল খট্টর। কিন্তু কৃষক বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রশাসন যত কড়া হচ্ছে, তত বিক্ষোভের আঁচ ছড়াচ্ছে হরিয়ানায়। শিখদের পাশাপাশি কৃষিজীবী জাঠ সমাজ খট্টর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে। বিজেপি মনে করছে, লোকসভা ভোট পর্যন্ত বিক্ষোভ চললে হরিয়ানায় ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি।

তবে কৃষকদের সব থেকে বড় সংগঠন— সংযুক্ত কিসান মোর্চা এখনও সে ভাবে ওই আন্দোলনে যোগ দেয়নি। ছোট-বড় প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি কৃষক সংগঠন রয়েছে ওই মোর্চার ছাতার তলায়। মূলত যাদের চাপের কাছে গত বার নতি স্বীকার করে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। হরিয়ানায় সম্প্রতি কৃষক মৃত্যুর পরে ওই সংগঠনের সদস্যেরা হরিয়ানা ও পঞ্জাবে একাধিক বিজেপি নেতার বাড়ি ঘেরাও করলেও কিসান মজদুর মোর্চার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজোট হয়ে বিরোধিতায় নামেননি।

দুই শিবিরের ওই ব্যবধানকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিশেষ করে কেন নির্বাচনের আগে এ ভাবে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আন্দোলনে কংগ্রেসের ভূমিকা, পঞ্জাবে আপ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষক সমাজের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। দলের এক নেতার কথায়, প্রথম কৃষি আন্দোলনের পরে উত্তরপ্রদেশের জাঠবহুল পশ্চিম প্রান্তে ভাল ফল করেছিল দল। অথচ ভাবা হয়েছিল, উত্তর-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ধুয়ে-মুছে যাবে দল। কিন্তু উত্তর-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ২৪টি জেলার ১২৬টি বিধানসভায় ৮৫টি আসন পায় বিজেপি। যা ২০১৭ সালের আসন প্রাপ্তির চেয়ে কেবল ১৫টি কম। তাই মানুষের কাছে যদি পৌঁছনো যায়, হরিয়ানায় অন্তত ভাল ফলের আশা করতেই পারে দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement