দশ বছর অন্তত ক্ষমতায় আছিই, ছাত্রকে জবাব দিয়ে বিতর্কে মোদী

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক তো ছিলই, এ বার বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন খোদ শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীও। অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতার নামেও নরেন্দ্র মোদী রাজনীতিই করেছেন। কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই আজ, শিক্ষক দিবসের দিন গোটা দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বক্তব্য রাখবেন বলে ঠিক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লিখিত নির্দেশ ছিল না। কিন্তু অলিখিত ভাবে দিল্লি থেকে দেশের প্রতিটি স্কুলে নির্দেশ যায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। ছুটির ঘণ্টা বেজে গেলেও বসে থাকতে হবে পড়ুয়াদের। বাস্তবে হয়েছেও তাই। সকালে বসে এমন অনেক স্কুল আজ তাদের সময় পরিবর্তন করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৭
Share:

সৌজন্যে যোগযোগ-প্রযুক্তি। শিক্ষক দিবসে নয়াদিল্লিতে বসেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যত্র তিনি পর্দায় হাজির হলেও কিছু স্কুলে ভরসা ছিল রেডিওই। (ডান দিকে) ধানবাদের তেমনই একটি স্কুলে তাঁর কথা শুনছে পড়ুয়ারা। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই ও চন্দন পাল।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক তো ছিলই, এ বার বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন খোদ শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীও। অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতার নামেও নরেন্দ্র মোদী রাজনীতিই করেছেন।

Advertisement

কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই আজ, শিক্ষক দিবসের দিন গোটা দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বক্তব্য রাখবেন বলে ঠিক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লিখিত নির্দেশ ছিল না। কিন্তু অলিখিত ভাবে দিল্লি থেকে দেশের প্রতিটি স্কুলে নির্দেশ যায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। ছুটির ঘণ্টা বেজে গেলেও বসে থাকতে হবে পড়ুয়াদের। বাস্তবে হয়েছেও তাই। সকালে বসে এমন অনেক স্কুল আজ তাদের সময় পরিবর্তন করেছে। ছুটি হয়ে যাওয়ার পরেও অনেক স্কুল বসিয়ে রেখেছে ছাত্র-ছাত্রীদের। এমন ভোগান্তির কথা ভেবে অনেক অভিভাবকই আবার ছেলেমেয়েদের আজ স্কুলেই পাাঠাননি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াবে আশঙ্কা করে প্রথম থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর ক্লাস বসেছিল দিল্লির মানেক শাহ প্রেক্ষাগৃহে। হাজির ছিলেন রাজধানীর সাতশো পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকা। বিকেল তিনটে থেকে টানা দেড় ঘণ্টা চলে আলাপচারিতা। যোগাযোগ-প্রযুক্তির সৌজন্যে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন মোদী। উত্তর দেন তাদের প্রশ্নের। তেমনই এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই আজ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মোদী।

Advertisement

ইম্ফলের এক ছাত্রের সিধেসাপটা প্রশ্ন ছিল, “আগামী দিনে আমিও কী ভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারি?” মোদী এর যা জবাব দিয়েছেন, তাতেই বেধেছে বিতর্ক। তাঁর কথায়, “তা হলে এখন থেকেই ২০২৪ সালের জন্য প্রস্তুতি শুরু কর। এবং তোমার শপথগ্রহণে আমাকে আমন্ত্রণ জানিও। এর মানে হল, ওই সময় পর্যন্ত আমার (গদি হারানোর) কোনও ভয় নেই।”

লোকসভা ভোটে জয়ের পরপরই প্রথম বার গুজরাত সফরে গিয়ে মোদী জানিয়েছিলেন, তিনি আগামী দশ বছরের রোডম্যাপ মাথায় রেখে কাজ শুরু করছেন। আজ ছোট এক স্কুলপড়ুয়ার কাছেও নিজের সেই রাজনৈতিক পরিকল্পনাই তুলে ধরেন তিনি। বুঝিয়ে দেন, পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও আগামী অন্তত দশ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এ দিন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সরাসরিই দেখানো হয়েছে এই আলাপচারিতা। মোদীর ওই জবাবের পরপরই এ নিয়ে সরব হন কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রধান বিরোধী দলের বক্তব্য, আমাদের আশঙ্কা ছিল শিক্ষক দিবসেও রাজনীতি করতে ছাড়বেন না মোদী। বাস্তবেও তা-ই হল। শিক্ষক দিবসে অনুষ্ঠানের নামে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন মোদী। আর তার জন্য ভুগতে হল ছোট-ছোট বাচ্চাদের। কংগ্রেসের সলমন খুরশিদের কটাক্ষ, “এ তো দেখছি, পরের লোকসভার ফলও জেনে গিয়েছেন উনি।”

শিক্ষক দিবসে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা এ দেশে কার্যত নজিরবিহীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টদের প্রায়ই স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। কিন্তু সে দেশে সেই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার হয় না। চাইলে পরে সেই অনুষ্ঠান টিভি বা ইন্টারনেটে দেখে নেয় ছাত্র-ছাত্রীরা। মোদীর ক্লাস নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত, তাতে হাজির থাকা বাধ্যতামূলক করা নিয়ে। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক। মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি অবশ্য সেই দাবি নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, “শোনাটা বাধ্যতামূলক, এমন কোনও নির্দেশিকা পাঠানো হয়নি।” যদিও বাস্তব বলছে অন্য কথা। ছুটির পরেও ছাত্র-ছাত্রীদের বহুক্ষণ স্কুলে বসিয়ে রাখা নিয়ে বিরোধীদের ব্যাখ্যা, জেনেশুনে কে আর মন্ত্রককে চটানোর ঝুঁকি নেবে। মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে চলাটাই নিরাপদ বলে মনে করছে স্কুলগুলি।

মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশও স্বীকার করেছেন, সিবিএসসি স্কুলগুলিই শুধু নয়, দেশের ১৮ লক্ষ স্কুলের জন্যও বিষয়টি কার্যত বাধ্যতামূলক ছিল। কারণ, কোন স্কুলে কত জন ছাত্র-ছাত্রী আজ ওই ক্লাস শুনেছে সেই রিপোর্টও মন্ত্রক জোগাড় করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যদিও এ বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “দেশের কতগুলি স্কুলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে, আমরা এর মাধ্যমে সেটাও দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের ব্যাখ্যা, গোটা দেশের স্কুলগুলির পরিকাঠামোর ছবিটা বুঝতে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে, দেশের কত শতাংশ স্কুলে বিদ্যুৎ, টিভির মতো ন্যূনতম বিষয়গুলি রয়েছে। তার পরে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

ইদানিং মন্ত্রীরা অনেকেই স্বীকার করছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর কড়া মনোভাবে তাঁরা তটস্থ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনি এত কড়া, শিক্ষক হিসেবে তাঁর ভূমিকা কেমন হত? এই প্রশ্নের উত্তরে মোদী বলেন, “আমি টাস্ক মাস্টার। আমি কঠোর পরিশ্রম করতে ভালবাসি। আর লোককে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতেও পছন্দ করি।” একই সঙ্গে এ দিনের প্রশ্নোত্তর পর্বে নারীশিক্ষা, স্কুলে মেয়েদের আলাদা শৌচালয় তৈরির উপরে জোর দেন মোদী। তিনি বলেন, “পৃথক শৌচালয় না থাকায় চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণির মেয়েরা স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সরকার এই ছবিটা পাল্টাতে চায়।” পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের আরও খেলাধুলো করা, পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠার পরামর্শ দেন মোদী। এর পাশাপাশি, দেশের সমস্ত শিক্ষকের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠিতে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের কথা উল্লেখ করে আগামী দিনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement