দিল্লির কোচিং সেন্টারের দুর্ঘটনায় মৃত পড়ুয়া তানিয়া সোনি। ছবি: সংগৃহীত।
দিল্লির রাজেন্দ্রনগরে কোচিং সেন্টারে তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর টিভিতে দেখে চমকে উঠেছিলেন বিজয় কুমার এবং তাঁর স্ত্রী। যে কোচিং সেন্টারে তাঁদের কন্যা গত মাসেই ভর্তি হয়েছিল, সেই কোচিং সেন্টারে এমন দুর্ঘটনায় বুক কেঁপে উঠেছিল তাঁদের। বিন্দুমাত্র দেরি না করে কন্যা তানিয়াকে ফোন করেছিলেন বিজয় কুমার। কিন্তু না, কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। বার বার ফোন করে যাচ্ছিলেন বিজয়। তার পরেও কোনও উত্তর না পেয়ে তানিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিজয় এবং তাঁর স্ত্রী।
ফোনে এক বন্ধুকে তানিয়ার মা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেন, “মেয়ের কোনও সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। ফোন করেও পাচ্ছি না। দয়া করে ওর খোঁজ নাও তোমরা।” এই ফোন পেয়েই তানিয়া দুই বন্ধু কোচিং সেন্টারে যান। সেখানে পরিস্থিতি দেখে শিউরে উঠেছিলেন তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকেই তাঁরা জানতে পারেন বেসমেন্টের গ্রন্থাগারে জল ঢুকে গিয়েছে। সেখানে বহু পড়ুয়া আটকে রয়েছেন। এক এক করে পড়ুয়াদের বেসমেন্ট থেকে বার করে আনা হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে তানিয়াকে দেখতে না পেয়ে আরও বিচলিত হয়ে পড়েন তানিয়ার বন্ধুরা। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর তাঁরা জানতে পারেন তিন পড়ুয়ার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। দেহ উদ্ধারের সময় তাঁরা তানিয়াকে শনাক্ত করেন। তানিয়ার সঙ্গে আরও দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁরা হলেন শ্রেয়া যাদব এবং নবীন ডাভিল।
তানিয়ার এক বন্ধু এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যখনই আমরা দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরেছিলাম, ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলাম। ভিড়ের মাঝখান থেকে আমাদের বন্ধুর নিথর দেহ উদ্ধার করতে দেখলাম। কী ভাবে এ রকম হল ভাবতেই পারছি না।” তানিয়ার বাবা-মায়ের কাছেও তত ক্ষণে কন্যার মৃত্যু সংবাদটা পৌঁছে গিয়েছিল। কনিষ্ঠ কন্যার উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে নাগপুরের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে এসেছিলেন বিজয় কুমার এবং তাঁর স্ত্রী। সেখানে থাকতেই বড় কন্যার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে তানিয়ার গোটা পরিবার।
তানিয়ার বাবা বলেন, “১০ দিন আগেই বন্ধুদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেছিল মেয়ে। শনিবারেও কথা হয়েছিল মেয়ের সঙ্গে। কেমন পড়াশোনা চলছে, তা নিয়েও কিছু কথা হয়। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আমলা হওয়ার। তাই তেলঙ্গানা থেকে দিল্লিতে চলে এসেছিল। কিন্তু ওর আর আমলা হয়ে ওঠা হল না।” এই ঘটনার জন্য কোচিং সেন্টারের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তানিয়ার বাবা।
তানিয়ার এক সহপাঠী ঋষি বলেন, “গত জুনেই ওর স্নাতক স্তরের ফল বেরিয়েছিল। নম্বর দেখে অত্যন্ত খুশি ছিল। জীবনের নতুন একটি পর্বে পা রাখার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিল তানিয়া। জুলাইয়েই আইএএস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিল।” দিল্লির মহারাজা অগ্রসেন কলেজ থেকে স্নাতক করেছিলেন তানিয়া। কবিতা লিখতে ভালবাসতেন বলেও জানিয়েছেন তানিয়ার আর এক সহপাঠী।