ISI Pakistan

Taliban-ISI: আইএসআই প্রধানের কাবুল পৌঁছনোর পরেই সরকার গঠন, পাক হাতের ছাপে শঙ্কিত সাউথ ব্লক

গোটা প্রক্রিয়ায় লাভবান হয়েছে হক্কানি নেটওয়ার্ক। সিরাজুদ্দিনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার ফলে বার্তা স্পষ্ট, মন্ত্রিসভা চলবে আইএসআই নির্দেশে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:২৩
Share:

আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈজ় হামিদ ফাইল চিত্র।

আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈজ় হামিদ কাবুলে পৌঁছনোর তিন দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করল তালিবান সরকার। বিষয়টিকে নেহাতই কাকতালীয় হিসেবে দেখছে না সাউথ ব্লক। বরং এই তালিবান সরকারে আইএসআই-এর সিলমোহর দিবালোকের মতো স্পষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারত এবং অন্যান্য বেশ কিছু দেশের চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের চিহ্নমাত্র নেই। কট্টরপন্থী এই সরকারে পাশতুন প্রাধান্যই রয়েছে শুধু নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ জঙ্গি তালিকা থেকে সিরাজুদ্দিন হক্কানি থেকে শুরু করে বেশ কিছু নাম মন্ত্রী-তালিকায় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে বিপুল ডলারে মাথার দাম ঘোষিত রয়েছে তালিবান সরকারের একাধিক নেতার নামে।

Advertisement

বিদেশ মন্ত্রকের মতে, নতুন তালিবান সরকারে রাওয়ালপিন্ডির হাতের ছাপ ক্রমশ স্পষ্টতর হবে। হক্কানি নেটওয়ার্ক এবং কন্দহরের তালিবান গোষ্ঠীর মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রভাব বাড়াবে পাকিস্তান তথা আইএসআই। দোহায় যে নেতারা আলোচনা চালাচ্ছিলেন, তাঁদের সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হল না, যা ভারতের জন্য অশনি সংকেত। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাছা হল মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানি। শুধু হক্কানিই নন, ভারতের হিসেব অনুযায়ি, আফগান মন্ত্রিসভার ৩৩ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জন রয়েছেন যাঁরা কন্দহর-ভিত্তিক তালিবান এবং হক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্য। তাঁদের ভারত-বিরোধিতা সুবিদিত।

নয়াদিল্লি মনে করছে, এই গোটা প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে হক্কানি নেটওয়ার্ক। সিরাজুদ্দিনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার ফলে বার্তা স্পষ্ট, মন্ত্রিসভা চলবে আইএসআই-এর তর্জনী নির্দেশে। মুজাহিদিন যোদ্ধা জালালুদ্দিনের ছেলে এই সিরাজুদ্দিনের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ঘাঁটি গাড়া আল কায়দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পিছনেও ছিল হক্কানির হাত। ৫৮ জনের মৃত্যু হয় ওই ঘটনায়। তার পরের দু’বছরেও আফগানিস্তানে ভারতীয়দের উপর হামলা চালায় তারা। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলার দিকটি দেখাই নয়, সিরাজুদ্দিন সমস্ত প্রদেশের স্থানীয় গভর্নর নিয়োগও করবেন। নয়াদিল্লির মতে, তার অর্থ, গোটা আফগানিস্তানে আইএসআই-এর বাছাই করা লোক ছড়িযে যাবে। ভারত এবং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যার গভীর প্রভাব পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisement

মঙ্গলবার যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে পুরনো জমানার (১৯৯৬-২০০১) নেতারা ভর্তি। প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দ তালিবানদের প্রধান পরিষদ ‘রাহবারি সুরা’র প্রধান। বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিই। রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় থাকা আখুন্দ কন্দহরের বাসিন্দা, যেখানে তালিবান গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, ৩০ জন আদি তালিবান নেতার এক জন এই আখুন্দ। পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় তিনি পড়েছেন এবং পরবর্তী কালে অস্ত্রশিক্ষা পেয়েছেন।

আখুন্দকে সামনে এনে মোল্লা বরাদরকে কিছুটা ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। বরাদর ১৯৯৪ সালে তালিবান গঠনের প্রথম দিন থেকেই রয়েছেন। তিনি প্রাক্তন সর্বাধিনায়ক মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। পরবর্তী কালে দোহায় তালিবানের রাজনৈতিক অফিসে বসে আন্তর্জাতিক স্তরে দৌত্য করেছিলেন বরাদর। ভারত-সহ অনেক দেশেরই ধারণা ছিল, তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী করা হবে। সে ক্ষেত্রে কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকত ভারত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাঁকে সরকারের দু’নম্বরে রাখা হল।

সূত্রের খবর, ভারত যোগাযোগ রাখছিল শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজ়াইয়ের সঙ্গেও, এই আশায় যে তাঁকে বিদেশমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না। তাঁকে করা হল উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ অন্য দেশের সঙ্গে দৌত্যে তাঁর ভূমিকা থাকবে না। অথচ ৩১ অগস্ট কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন স্তানিকজ়াই। সেটাই ছিল তালিবানের সঙ্গে ভারতের প্রথম প্রকাশ্য বৈঠক। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারত। স্তানিকজ়াই আশ্বাস দেন, আফগানিস্তানের মাটি ভারত বিরোধী সন্ত্রাসে ব্যবহার করা হবে না। হতাশ বিদেশ মন্ত্রক ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, সেই আশ্বাসের আর কোনও মূল্যই রইল না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement