—ফাইল চিত্র।
আর কোনও রাখঢাক নয়। বরং নোভেল করোনার জেরে উদ্ভুত মহামারি পরিস্থিতির জন্য এ বার সরাসরি তবলিগি জামাতের সমাবেশকে দায়ী করল কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের দাবি, সরকারি বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে ওই জমায়েত করা হয়েছিল। সামাজিক দূরত্ব বিধির বালাই ছিল না সেখানে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের তাগিদও দেখাননি কেউ। সেখান থেকেই ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সংসদেও তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। সেই অবস্থায় সোমবার রাজধানীর পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন শিবসেনা সাংসদ অনিল দেসাই। তবলিগি জামাত সমাবেশ থেকেই রাজধানী এবং দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল কি না জানতে চান তিনি। ঠিক কত জন ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন এবং কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্যও দাবি করেন।
সেই প্রশ্নের লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের তরফে নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। তার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে একটি বদ্ধ জায়গার মধ্যে অত জন মিলে ভিড় করেছিলেন। না সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই ছিল সেখানে, না ঠিক মতো মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করার তাগিদ ছিল। সেখান থেকেই অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল।’’
আরও পড়ুন: কোভিড যুদ্ধে হু-র ‘মডেল’ পাকিস্তান, নেপথ্যে কি চিনেরই হাতযশ!
গত ২৯ মার্চ দিল্লির নিজামউদ্দিন মরকজ থেকে মোট ২ হাজার ৩৬১ জনকে পুলিশ বার করে আনে বলে এ দিন রাজ্যসভায় জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। জি রেড্ডি বলেন, ‘‘তবলিগি জামাতে অংশ নেওয়া ২৩৩ জনকে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জামাত প্রধান মৌলানা মহম্মদ সাদের বিরুদ্ধে এখনও তদন্ত চলছে।’’
গত মার্চ মাসে দিল্লির নিজামউদ্দিন মরকজে তবলিগি জামাতের সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন বহু বিদেশি নাগরিকও। তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে দিল্লি পুলিশ। ৩৬টি দেশ থেকে আগত ৯৫৬ বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫৯টি চার্জশিট জমা দিয়েছে তারা। তাতে বলা হয়েছে, পর্যটন ভিসায় ভারতে এসে ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। ভিসা বাতিল করে ওই বিদেশি নাগরিকদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তবলিগি জামাতে অংশ নেওয়ার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কয়েক জন প্রাণ হারান। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে তবলিগি জামাত প্রধান মৌলানা সাদ কান্ধলভির বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলাও দায়ের করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও মহামারি, বিপর্যয় মোকাবিলা ও বিদেশি আইনে মৌলানা ও আরও ছ’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়।
আরও পড়ুন: ‘কালো রবিবার’, কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বললেন মমতা
তবে দেশ জুড়ে যে মহামারি পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তবলিগি জামাতের ঘাড়ে তার দায় চাপানোর তীব্র প্রতিবাদ করেছে বম্বে হাইকোর্ট-সহ বিভিন্ন রাজ্যের আদালত। অগস্ট মাসে ২৯ জন বিদেশি তবিলিগি জামাত সদস্য এবং ৭ জন ভারতীয় জামাত সদস্যের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রে দায়ের হওয়া এফআইআর বাতিল করে দেয় বম্বে হাইকোর্টের অওরঙ্গাবাদ বেঞ্চ।
সেই সময় বম্বে হাইকোর্ট বলে, ‘‘রাজনৈতিক চাপে পড়ে জামাত সদস্যদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। নিজামউদ্দিন মরকজে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে বড় ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। দেশ জুড়ে বিপর্যয় নেমে এলে, মহামারি পরিস্থিতি দেখা দিলে সরকার বলির পাঁঠা খোঁজার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে ওই বিদেশিদের বলির পাঁঠা করা হয়।’’
আদালত আরও জানায়, নিজামউদ্দিনে আসা বিদেশিদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হয়। এমন একটা ছবি তৈরির চেষ্টা চলছিল যাতে মনে হয়, তাঁদের জন্যই ভারতে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। তা না করে এই মুহূর্তে দেশে যে অতিমারি দেখা দিয়েছে, তাতে পরস্পরের প্রতি আরও সহিষ্ণু এবং সংবেদনশীল হওয়া উচিত।