দিল্লির অনুষ্ঠানে কৃষ্ণ। পিটিআই
দিল্লিতে তাঁর গানের অনুষ্ঠান ঘিরে তৈরি হওয়া তিক্ততাকে পিছনে ফেলে নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কন্নড় গায়ক টি এম কৃষ্ণ। সব মালিন্যকে ধুয়ে ফেলতে তাঁর প্রাণের কাছেই রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’। চেন্নাই থেকে ফোনে শান্ত অথচ দৃপ্ত কণ্ঠে জানাচ্ছেন ‘আঁধারের গায়ে গায়ে’ সেই পরশের কথা।
‘‘রবীন্দ্রনাথ তো নিছক বাঙালি নন। উনি বিশ্বজনীন একটি স্বর। সাহসের, লড়াইয়ের, প্রতিবাদের, উৎসবের, ভালবাসার স্বর। আজকের এই কঠিন সময়ে তাঁর কাছ থেকে শক্তি না নিয়ে উপায় নেই আমাদের। তাঁর অনেক গানই আমি গাই।’’ চলতি বছরের গোড়ায় ভিন্ ধর্মের গান গাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কৃষ্ণকে। কার্যত একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণী সঙ্গীতের এই তারকাকে। রাজধানীর নেহরু পার্কে গত সপ্তাহে এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমালোচক এবং উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত কৃষ্ণকে আমন্ত্রণ জানানোয় এএআইয়ের বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীদের ট্রোলিং শুরু হয়। সমালোচনার মুখে সেই অনুষ্ঠান এএআই বাতিল করে দেয় বলে অভিযোগ। তার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের হস্তক্ষেপে ১৭ তারিখ অন্য একটি অনুষ্ঠান হয় দিল্লিতেই।
ক্ষোভ ভিতরে চাপা রেখে শান্ত স্বরেই কৃষ্ণ ‘কঠিন সময়ের’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, ‘‘সর্বত্র আতঙ্ক এবং আক্রোশের বুদবুদ তৈরি হয়েছে। আমরা সাড়া দিতে ভুলে গিয়েছি, সব সময় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। সব থেকে বড় কথা, আমরা শুনতে চাইছি না কিছু। একজন সঙ্গীতশিল্পীর কাছে এর থেকে দুর্দশা আর কী হতে পারে!’’ এই অসহিষ্ণুতার মধ্যে তাঁর সঙ্গী যে রবি ঠাকুর, সে কথাই বারবার বলছেন ২০১৬ সালে ম্যাগসাইসাই খেতাব জয়ী এই শিল্পী। ‘‘আসলে চেন্নাইয়ে আমাদের কলেজের প্রার্থনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া হত। আমার গুরু বি সীতারাম শর্মার উপর শান্তিনিকেতনের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। এমনকি বাংলায় ‘শ্যামা’ মঞ্চস্থ করেছিলেন তিনি দক্ষিণে! বাংলা এখনও ভাল বুঝি না ঠিকই, কিন্তু অনুবাদে রবীন্দ্রনাথের গানগুলি পড়ে অনুপ্রাণিত হই।’’
সদ্য দিল্লিতে অপমানিত হয়েছেন। কিন্তু কৃষ্ণ তরা পরেও মনে করেন, মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। মনে রাখতে চান বিরোধিতা সত্ত্বেও কেজরীবালের উদ্যোগে হওয়া অনুষ্ঠানটি।’’ বললেন, ‘‘বড় সুন্দর সন্ধেটা কাটল দিল্লিতে। বিভিন্ন মতের মানুষ এসেছিলেন গান শুনতে। ঘৃণা, ক্রোধকে হারিয়ে গণতন্ত্রের, বহুত্ববাদেরই জয় ছিল সেটা।’’
নরেন্দ্র মোদী সরকারের নাম না করে কৃষ্ণর বক্তব্য, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারির কারণে অনেকে চুপ করে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ভিতরে ভিতরে সক্রিয়। প্রান্তিক, সংখ্যালঘু, দলিত সমাজ জেগে উঠছে। এ এক দুর্দান্ত ব্যাপার। আমার বিশ্বাস, এই অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আলো রয়েছে।’’