ধর্ষণের অভিযোগ স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে। —ফাইল চিত্র।
যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন আগেই। এ বার বিজেপি নেতা তথা দেশের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ আনলেন উত্তরপ্রদেশের সেই আইনের ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ, টানা এক বছর ধরে তাঁকে ধর্ষণ করেছেন স্বামী চিন্ময়ানন্দ। ধর্ষণের ভিডিয়ো রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেলও করেছেন।
গত মাসের শেষ দিকে ফেসবুক ভিডিয়োয় প্রথম স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের এসএস ল’কলেজ-এর ২৩ বছর বয়সী ওই ছাত্রী। সন্ত সমাজের প্রভাবশালী নেতা চিন্ময়ানন্দ তাঁর মতো বহু মেয়ের সর্বনাশ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তার পর দু’সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও, এখনও পর্যন্ত চিন্ময়ানন্দকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলাও দায়ের হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতেই সম্প্রতি দিল্লি পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজের বয়ান রেকর্ড করেন ওই তরুণী। তাতে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন তিনি। ১২ পাতার অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, গত বছর জুনে ৭৩ বছরের চিন্ময়ানন্দের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। শাহজানপুরের এসএস ল’কলেজ-এর ডিরেক্টর চিন্ময়ানন্দ তাঁকে কলেজে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। যেচে ফোন নম্বর চেয়ে নেন। পারিবারিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরে কলেজের লাইব্রেরিতে পাঁচ হাজার টাকার চাকরিও জুটিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: এমসেই ‘কোর্টরুম’, উন্নাও কাণ্ডে নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড, আনা হল সেঙ্গারকেও
এর পরেই তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয় বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর দাবি, অক্টোবর মাসে তাঁকে কলেজের হস্টেলে থাকার নির্দেশ দেন চিন্ময়ানন্দ। নিজের আশ্রমেও তাঁকে ডেকে পাঠান। সেখানে পৌঁছলে হস্টেলের বাথরুমে তাঁর স্নান করার একটি ভিডিয়ো রেকর্ডিং দেখান। হস্টেলের বাথরুমের ভিডিয়ো তাঁর কাছে কী ভাবে এল, তা যদিও খোলসা করেননি চিন্ময়ানন্দ। তবে সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন তিনি।
ধর্ষণ করার সময়ও চিন্ময়ানন্দ ভিডিয়ো রেকর্ড করেন বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। তাঁর দাবি, সেই ভিডিয়ো দেখিয়েই পরবর্তী কালে একাধিক বার তাঁকে ব্ল্যাকমেল এবং ধর্ষণ করেন চিন্ময়ানন্দ। মাঝে মধ্যে বডি মাসাজ করতেও চিন্ময়ানন্দ তাঁকে ডেকে পাঠাতেন। রাজি না হলে, লোক পাঠিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁকে যেতে বাধ্য করা হত। দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই চলছিল। উপায় না দেখে শেষমেশ গোপনে চশমায় লাগানো ক্যামেরার সাহায্যে চিন্ময়ানন্দেরই ভিডিয়ো রেকর্ড করেন ওই তরুণী। প্রমাণ হিসাবে সেগুলি জড়ো করতে শুরু করেন তিনি। তার পর গত মাসে ফেসবুকে ওই ভিডিয়ো পোস্ট করেন। সেখানে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রমাণ সামনে আনতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: দুই বিয়েতেও ক্ষান্ত নয় যুবক, তৃতীয় বার চেষ্টা করতেই প্রাক্তন স্ত্রীদের হাতে জুটল বেদম মার
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (এসটিএফ) ইতিমধ্যেই টানা ১৫ ঘণ্টা ধরে ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এক বন্ধুর সাহায্যে ওই ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের একটি পেনড্রাইভ তদন্তকারী অফিসারদের হাতা তিনি তুলে দিয়েছেন বলে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর আগে, মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সময়, গোটা ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলেছিলেন স্বামী চিন্ময়ানন্দ। উন্নাও কাণ্ডের অভিযুক্ত কুলদীপ সিংহের মতো তাঁকেও ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। নির্যাতিতার অভিযোগ খারিজ করেছেন তাঁর আইনজীবী ওম সিংহও।