শত্রুঘ্ন সিনহা। -ফাইল ছবি।
ভাল না লাগলে বিজেপি ছেড়ে দিন। অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহার জন্য এই বার্তা দিল বিজেপি। মঙ্গলবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বলেন, ‘‘শত্রুঘ্ন সিনহা আমারও আইকন। কিন্তু যে ভাবে উনি বিজেপিকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে, দলটাকে ওঁর ভাল লাগছে না। তা হলে দলটা ওঁর ছেড়ে দেওয়া উচিত। যে দল ওঁকে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী করেছিল, দু’বার পাঠিয়েছিল লোকসভায়, দু’-দু’বার রাজ্যসভারও সদস্য করেছিল, উনি সেই দলের বিরুদ্ধেই যা মনে আসছে, তাই বলে যাচ্ছেন। উনি আসলে যশবন্ত সিনহার পাল্লায় পড়েছেন।’’
গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন শত্রুঘ্ন। বিহারের ক্ষেত্রে, জাতীয় ইস্যুতেও। আর অনেক সময়েই সেই সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে, সভা-সমাবেশে। খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতে। নোটবন্দি, জিএসটি ইস্যুতে। হালে রাফাল চুক্তি ও বিজয় মাল্য ইস্যুতেও।
কিন্তু সে সবের চেয়েও যেটা বিজেপির পক্ষে বেশি অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে, তা হল শত্রুঘ্ন এখন ঘন ঘন বিজেপি-বিরোধী নেতাদের বাড়িতে-বাড়িতে যেতে শুরু করেছেন। বিহারে বিজেপির ঘোর শত্রু রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে কথা বলতে দিনকয়েক আগে পটনায় তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন শত্রুঘ্ন। তার আগে ডিসেম্বরে রাঁচীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে (আরআইআইএমএস) থাকা অসুস্থ লালুপ্রসাদকে দেখতে গিয়েছিলেন শত্রুঘ্ন। লালুর ছেলে তেজস্বী গত বছর প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘চাচা (শত্রুঘ্ন) আমাদের সঙ্গে আছেন।’’
আরও পড়ুন- লালুর কাছে শত্রুঘ্ন, জল্পনা আরজেডি টিকিটের
আরও পড়ুন- শত্রুঘ্ন সিন্হা আর ‘ভিআইপি’ নন!
পটনার রাজনৈতিক মহলের খবর, শত্রুঘ্ন চাইছেন দল (বিজেপি) যদি তাঁকে ছাড়তেই হয়, তা হলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তিনি আরজেডির টিকিটে লড়বেন পটনা সাহিবে। বিজেপি ছেড়ে পটনা সাহিবে ভোটে লড়লে যাতে কংগ্রেসেরও সমর্থন পান, সেই চেষ্টাতেও খামতি নেই শত্রুঘ্নর। তাই তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগসাজশ রাখতে দেখা যাচ্ছে। সুশীল বলেছেন, ‘‘উনি লালুজির সঙ্গে দেখা করেছেন। ওঁর ছেলে তেজস্বীকে তো উনি মুখ্যমন্ত্রী বানাতে চাইছেন।’’
সুশীল এও বলেছেন, গত লোকসভা ভোটে অভিনেতা শত্রুঘ্নর ‘ক্যারিশমা’ ফ্যাক্টর হয়নি, পটনা সাহিব আদতে বিজেপিরই আসন। সুশীল বলেছেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটে শত্রুঘ্ন জিততে পেরেছিলেন নন্দ কিশোর যাদব, সঞ্জীব চৌরাসিয়া, অরুণ কুমার সিনহা ও নিতিন নবীনের মতো বিজেপি নেতাদের যৌথ প্রচেষ্টায়।’’
পটনা সাহিব আসনে তিনি দাঁড়াতে চান কি না, সেই প্রশ্নে সুশীল বলেছেন, ‘‘দল চাইলে, দাঁড়াব। না চাইলে, দাঁড়াব না। আমি বিজেপিতেই জন্মেছি, বিজেপিতে থেকেই মরব।’’ ২০০৪-এ ভাগলপুর আসন থেকে লোকসভায় গিয়েছিলেন সুশীল। তার পরের বছর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ সরকারে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে আসা হয় বিহারের রাজনীতিতে।
পটনা সাহিব আসন থেকে ভোটে দাঁড়ানোটাও যেন ‘বাঁচা-মরা’র প্রশ্ন হয়ে উঠেছে শত্রুঘ্নর কাছে। যেন হয়ে উঠেছে তাঁর প্রেস্টিজ ইস্যু। পটনার রাজনৈতিক মহলের খবর, এ বারও লোকসভা ভোটে আরজেডির টিকিটে পটনা সাহিব আসনে লড়তে চাইছেন শত্রুঘ্ন। তাই বার বার তাঁকে লালুপ্রসাদের কাছে ছুটতে দেখা যাচ্ছে। সমর্থন সঙ্গে রাখার জন্য তাঁকে যোগসাজশ রাখতে দেখা যাচ্ছে বিহারের কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে। শত্রুঘ্ন বলেছেন, ‘‘বিজেপি আমাকে পটনা সাহিবের টিকিট দেয়নি। আমিই ওই আসন চেয়ে নিয়েছিলাম। আমি আবার দাঁড়াব পটনা সাহিবেই।’’