বাঘের জঙ্গলে পথ কুকুরের দাপট— ফাইল চিত্র।
পোশাকি নাম ‘ব্র্যাঘ্রপ্রকল্প’। কিন্তু সেখানে আদতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পথ কুকুররা! দেশের বিভিন্ন টাইগার রিজার্ভে সাম্প্রতিক বাঘ সুমারিতে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং’য়ে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের ১৭টি ব্যাঘ্রপ্রকল্পে পথ কুকুরের (জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘ফেরাল ডগ’) সংখ্যা বাঘের চেয়েও বেশি। দেশের ৫০টি ব্যাঘ্রপ্রকল্পের মধ্যে অন্তত ৩০টি যথেষ্ট উপস্থিতি রয়েছে সারমেয় বাহিনীর।
বাঘ এবং অন্য বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে বলে বনে করছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ও পরিববেশবিদেরা। তাঁদের মতে, ভারতের বেশ কিছু জঙ্গলে বুনো কুকুর (ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড ডগ বা ঢোল) রয়েছে ভাল সংখ্যাতেই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির নেড়ি কুকুরেরা যে ভাবে ‘বিস্তারবাদী’ হয়ে উঠেছে তা যথেষ্টই উদ্বেগের। পাশাপাশি, কয়েকটি বাঘবনে অবাধে গবাদি পশুচারণের বিষয়টিও ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ (এনটিসিএ)-র সমীক্ষা জানাচ্ছে, জঙ্গলবাসী এই নেড়ি কুকুরদের খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন ঘটেছে। তারা হরিণ, নীলগাই, খরগোশ শিকারে ক্রমশ দড় হয়ে উঠছে। ফলে বাঘ, চিতাবাঘ, নেকড়ে, বনবিড়াল এমনকি, ‘স্বজাতি’ ঢোলদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে তারা। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জঙ্গলের খাদ্যশৃঙ্খলে। এনটিসিএ-র সদস্য-সচিব এস পি যাদব বলেন, ‘‘গ্রামের কুকুর জঙ্গলে এলে তাদের থেকে বন্যপ্রাণীদের মারাত্মক রোগ সংক্রমণ হতে পারে। পরিস্থিতি তাই খুবই উদ্বেগের।’’ তিনি জানান, পথ কুকুরের থেকে বাঘ, চিতাবাঘ, নেকড়েরা যাতে ক্যানাইন ডিস্টেম্পারের মতো প্রাণঘাতী রোগের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় হয়েছে এনটিসিএ।
আরও পড়ুন: নয়া মানচিত্র এ বার ভারত, রাষ্ট্রপুঞ্জ, গুগলকে পাঠাবে নেপাল
সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, দেশের সাতটি প্রথম সারির টাইগার রিজার্ভে বাঘের চেয়ে পথ কুকুরের সংখ্যা বেশি। এগুলি হল, অন্ধ্রপ্রদেশের নাগার্জুনসাগর-শ্রীশৈলম, রাজস্থানের সরিস্কা, মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ, পান্না ও বান্ধবগড়, তামিলনাড়ুর সত্যমঙ্গলম এবং মহারাষ্ট্রের মেলঘাট। এই সাতটি ব্যাঘ্রপ্রকল্পে প্রায় ৪০০ বাঘের বসতি। এ ছাড়া, ঝাড়খণ্ডের পালামু, ছত্তীসগঢ়ের অচানকমার ও উদান্তি-সীতান্দি, তেলঙ্গানার কাওয়াল ও অমরাবাদ, কর্নাটকের আনসি-ডান্ডেলি, মধ্যপ্রদেশের সঞ্জয়-ঢুবুকি, মহারাষ্ট্রের বোর, রাজস্থানের মুকুন্দ্রা এবং পশ্চিমবঙ্গের বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পে নেড়ি কুকুরের অবাধ বিচরণ রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’, অযোধ্যা যাবেন, তবে ভূমিপুজোয় থাকবেন না উমা