ভোটের দায়েই বাহাদুরি জাহিরে পর্রীকর

নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে নিখুঁত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাল সেনা। আর বাহাদুরির ঝোল কোলে টানতে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল সরকার, দল ও সঙ্ঘ! প্রধানমন্ত্রী ঢাক পিটিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুক ঠুকে জাহির করার দরকার নেই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে নিখুঁত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাল সেনা। আর বাহাদুরির ঝোল কোলে টানতে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল সরকার, দল ও সঙ্ঘ! প্রধানমন্ত্রী ঢাক পিটিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুক ঠুকে জাহির করার দরকার নেই! কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ভোট-যুদ্ধ জয়ে তার উল্টোটাই করে যাচ্ছে বিজেপি। ময়দানে এ বার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর!

Advertisement

বিজেপির নেতারা গত কিছু দিন ধরেই সেনা অভিযান নিয়ে ফলাও প্রচার চালাচ্ছেন। কৃতিত্ব দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। পাশাপাশি আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতও কাল বিজেপির মনোবল বাড়িয়েছেন সরকারের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে। সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা দিবসে বার্ষিক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘সেনা অভিযান নিয়ে গোটা দেশ গদগদ।’’ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এটাও বিশেষ করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই সরকারের দৃঢ় সঙ্কল্প রয়েছে। এবং সেটা খুবই ভাল।

দল-সঙ্ঘের পরে এ বার খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কৃতিত্ব দিতে। এটা ঘটনা যে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ভারত খানিকটা সুবিধাজনক পরিসর পেয়েছে। ভারত এর পর কী করতে পারে, তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই সূত্রেই মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে পর্রীকর আজ পাকিস্তানকে এক দফা হুঁশিয়ারি দেন। মনে করিয়ে দেন, পরের বার আর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারে। এক বার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর ভারত ভবিষ্যতে আচমকা কী করবে, তা বুঝে উঠতে পারবে না পাকিস্তান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে এই কড়া বার্তাটি দিয়ে ক্ষান্ত হলে বিষয়টি এক রকম হতো। কিন্তু সীমান্তে লড়াইয়ের থেকেও উত্তরপ্রদেশে ভোট-যুদ্ধে জেতার তাগিদটা যে আরও বড়, সেটা নিজেই স্পষ্ট করে দেন এর পর। গোড়ায় আমতা আমতা করেও শেষ পর্যন্ত সেনা অভিযানের কৃতিত্ব দেন মোদীকেই। বলেন, ‘‘এই অভিযানের কৃতিত্ব পুরো সেনা ও দেশের জনতার। তবে এর পিছনে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। এ নিয়ে সকলের উচ্ছ্বাস স্বাভাবিক।’’

Advertisement

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যে পুরো দস্তুর রাজনীতিই করছেন, তা আরও স্পষ্ট করে দেন মনমোহন সিংহ জমানায় এমন অভিযানের কথা খণ্ডন করে। ক’দিন আগেই কংগ্রেস শিবির তাদের জমানার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে বিজেপিকে টেক্কা দিতে বলেছিল, ২০১১ সালে ভারতের দুই জওয়ানের মুণ্ড কেটে নেওয়ার বদলা নিতে তিন পাক সেনার মাথা কেটে এনেছিল আমাদের সেনারা। সেটিও ছিল ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। ফলে এই প্রথম বার এই ধরনের সেনা অভিযান হয়েছে বলে মোদীর ঢাক পেটানোর কোনও প্রয়োজন নেই। এই দাবি খণ্ডন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আজ বললেন, ‘‘গত দু’বছরে তিনি যা বুঝেছেন, ভারতীয় সেনা আগে কখনও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেনি। ওটা ‘বর্ডার অ্যাকশন টিম’-এর কাজ হবে, স্থানীয় কম্যান্ডার স্তরে যা আকছারই হয়ে থাকে।’’

পাল্টা ফোঁস করতে দেরি করেনি কংগ্রেস। তড়িঘড়ি ডাকা সাংবাদিক বৈঠক দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘২০১১-র ঘটনা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ই ছিল। অতীতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়নি বলে দাবি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কি সেনার কৃতিত্ব খাটো করতে চাইছেন?’’ সুরজেওয়ালার দাবি, এর আগে এই প্রতিরক্ষা মন্ত্রীই রাজনৈতিক কৃতিত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে বলেছেন, মোদী সরকারই নাকি প্রথম বার সেনার শক্তি সমঝে দিয়েছে দুনিয়াকে। মিথ্যার জাল বুনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম নাকি সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলা করেছে। আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে কৃতিত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেনার অতীত কৃতিত্বকেও খাটো করে দেখিয়েছেন। কংগ্রেসের মতে, দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার। সেনার বীরত্বকে ছাপিয়ে নিজেদের বাহাদুরির ঢাক পেটাচ্ছে।

এর জবাবে বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘কেনই বা হবে না? যখন একের পর এক জঙ্গি হামলা হচ্ছিল, এই বিরোধীরাই তো ফিতে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ছাতির মাপ কতটা কমলো, তা নিয়ে সরব হতেন! ৫৬ ইঞ্চি চুপসে ২৬ ইঞ্চি হয়ে গিয়েছে বলে তাঁরাই প্রচার করতেন। এখন মোদী দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলে সেটা প্রচারের দায়িত্ব তো বিজেপিরই।’’ বিজয়াদশমীতে কাল লখনউয়ে গিয়ে সন্ত্রাস দমনের কথা বলেও বক্তৃতার শুরু ও শেষে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেনা অভিযান নিয়ে কৃতিত্ব দাবি ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদী-অমিতরা। যাতে হিন্দু ভোটকে ফের একজোট করা যায়। গো-রক্ষার নামে দলিত ও সংখ্যালঘু নিগ্রহ যে ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন শুরু হয়েছিল।

বিরোধীরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কী ভাবে বিজেপির রণকৌশলের মোকাবিলা করবে? কখনও তাই মোদীর রাজনীতি নিয়ে সরব হচ্ছেন মায়াবতী। সমাজবাদী পার্টি আবার বিরোধিতায় না গিয়ে বলছে, মুলায়ম সিংহ যাদবই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পরামর্শ দিয়েছিলেন মোদীকে। আর মোদী ‘রক্তের দালালি’ করছেন বলে মন্তব্য করার পরে এখন নিজেকেই ঢোক গিলতে হচ্ছে রাহুল গাঁধীকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement