— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) নিয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি শেখরকুমার যাদবের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবারই শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি ইতিমধ্যে নজরে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের। শীঘ্রই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।
রবিবার প্রয়াগরাজে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিচারপতি শেখরকুমার বলেন, ‘‘এ দেশটা হিন্দুস্থান। সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইচ্ছা অনুযায়ীই দেশটা চলবে। কাঠমোল্লাদের থেকে সাবধান থাকুন!’’ বিচারপতির ওই মন্তব্যের পরেই প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ খোলেন বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অনেকে। সমালোচনায় সরব হন তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এমআইএম)-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট-সহ জোট ‘ইন্ডিয়া’র একাধিক নেতা। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের নেতারা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনুরোধ করেন। বিচারপতির কথার প্রতিবাদ জানায় অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়নও। এর পরেই ওই ঘটনায় পদক্ষেপ করেছে শীর্ষ আদালত।
রবিবারের সভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুসলিমদের নানা ধর্মীয় আইনের কথাও তোলেন বিচারপতি। তিন তালাক, বহুবিবাহ, হালাল ইত্যাদি আইনের প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেন, হিন্দুধর্মে মেয়েদের দেবী হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেখানে মেয়েদের এমন অসম্মান করা হয় না। শেখর এ-ও দাবি করেন যে, ইউসিসি শুধুমাত্র পদ্মশিবিরের আমদানি নয়, বরং দেশের সংবিধানও এমনই আদর্শের কথা বলে। এর পরেই এমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সংবিধান গণতন্ত্র এবং নিরপেক্ষতার কথা বলে, যেখানে সংখ্যালঘুর অধিকার সুরক্ষিত। এ রকম বিচারপতির কাছে কোনও সংখ্যালঘু কি সুবিচারের আশা করতে পারবেন?’’
প্রসঙ্গত, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হল সব ধর্মের মানুষের জন্য বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত এক এবং অভিন্ন আইন, যা কেন্দ্রে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চালু করার চেষ্টা করে এসেছে মোদী সরকার। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রস্তাবিত খসড়ায় ধর্মনির্বিশেষে পুরুষদের বহুবিবাহ বন্ধ করা এবং একত্রবাস নথিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা রয়েছে এই বিলে। এ ছাড়াও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকারের সংস্থান রাখা হবে। বিরোধীরা শুরু থেকেই ওই বিলের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের দাবি, ওই আইন চালু হলে দেশের বিভিন্ন ধর্মের নিজস্ব আচার আচরণে হস্তক্ষেপ করা হবে।