নাবাম টুকি
উত্তরাখণ্ডের পর অরুণাচল। মোদী সরকার ও বিজেপিকে ফের ধাক্কা দিয়ে অরুণাচল প্রদেশে কংগ্রেস সরকারকে বহাল করল সুপ্রিম কোর্ট। এমন একটি সময়, যখন বিজেপি গোটা উত্তর-পূর্বে কংগ্রেস-মুক্ত সরকার গড়ার তোড়জোড় করছে।
পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ রায় দেয়, অসাংবিধানিক উপায়ে নাবাম টুকির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে বর্তমান পিপিএ-বিজেপি সরকার। গত বছর ডিসেম্বরে কমিউনিটি হল ও হোটেলে অস্থায়ী বিধানসভা অধিবেশন ডেকে যে ভাবে স্পিকার নাবাম রিবিয়াকে অপসারণ ও টুকির বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ করিয়ে কালিখা পুল নেতা হন, তাতে রাজ্যপালের শিলমোহর দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেও কেন্দ্রীয় সরকার ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে। আর উত্তরাখণ্ডের পর অরুণাচলে কেন্দ্রকে ধাক্কা দেওয়ার পর উৎসাহিত সনিয়া-রাহুল গাঁধী আজ মোদী-বধে নেমে পড়েন আসরে।
শীর্ষ আদালত থেকে ধাক্কা খাওয়ার পর আজ মোদী সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীরা সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন। নিরন্তর যোগাযোগ রাখা হয় দার্জিলিংয়ে থাকা রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদরা বৈঠক করে স্থির করেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এখনও অনেক অসঙ্গতি আছে। কারণ, আজকের মামলাটি মূলত রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়ার ভূমিকা নিয়ে ছিল। এখনও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ও রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে কালিখা পুলকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানানোর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা বকেয়া রয়েছে। ফলে এখনও স্পষ্ট নয়, বিধানসভায় আস্থা ভোট কে প্রমাণ করবেন। সরকারের এক শীর্ষমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট এখন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে ফের শাসক দলে বসতে বলছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীকে বলছে বিরোধী শিবিরে বসতে। গণতন্ত্রে সংখ্যাই শেষ কথা। ফলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সাফাই চাওয়া হবে।’’
উত্তরাখণ্ডের বেলায় রাজ্যপালের রিপোর্টকে উপেক্ষা করেই কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিল। কিন্তু অরুণাচলে রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যে রিপোর্টে ত্রুটি থাকলে রাজ্যপালকে সরানোর কথাও বিবেচনা করতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু সে তো পরের কথা। আপাতত মোদী সরকার ও বিজেপির যে মুখ পুড়ল, সেটিকেই সামাল দিতে ব্যস্ত সরকার ও দল। সনিয়া গাঁধী আজ সকালেই জানিয়েছেন, ‘‘আশা করি, আজকের রায়ের পর সরকার আর ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না। যারা সংবিধান ও গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে, এটি তাদের হার।’’ প্রধানমন্ত্রীকে আরও সরাসরি আক্রমণ করে রাহুল গাঁধী টুইটে লিখেছেন, ‘‘গণতন্ত্র কী তা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ।’’ একই ভাবে আক্রমণে নেমেছেন অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ অন্য বিরোধীরা। সংসদের অধিবেশনের মুখে যেটি শিরে সংক্রান্তি হিসাবে দেখছে শাসক গোষ্ঠী।
ঘটনাচক্রে আজই উত্তর-পূর্বে ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কংগ্রেস-মুক্ত উত্তর-পূর্ব গড়ার লক্ষ্যে চার মুখ্যমন্ত্রী ও ন’টি দলের নেতাদের নিয়ে যে জোট গড়েছিলেন তিনি, আজ ছিল তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। তার আগেই সুপ্রিম কোর্টের রায় আছড়ে পড়লেও দিনের শেষে এই নিয়ে মুখ খোলেননি শাহ। তবে তাঁর দলের পক্ষ থেকে দিল্লিতে বলা হয়, এই ক্ষেত্রে বিজেপির কিছু করার নেই। এটি নিছক কংগ্রেসের অন্তর্কলহ। তাদের দল থেকেই বিক্ষুব্ধরা বেরিয়ে এসে অনাস্থা প্রকাশ করেন। বিজেপি নতুন সরকারকে সাহায্য করেছে মাত্র। তবে ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, অসম জয়ের পর গোটা উত্তর-পূর্বে যে ভাবে হইহই করে প্রসারের লক্ষ্য নিয়েছিলেন তাঁরা, আজকের রায়ে তা ধাক্কা খেল কিছুটা।
ঠিক কী হয়েছিল গত বছর ডিসেম্বরে?
রাজ্যের ৪৭ জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে ২১ জন টুকির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বিজেপির ১১ জন ও দুই নির্দল বিধায়কের সঙ্গে হাত মেলান। জানুয়ারিতে বিধানসভা বসার আগে রাজ্যপাল সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই ১৫ ডিসেম্বর বিধানসভা অধিবেশন ডাকেন। দলবিরোধী কাজের জন্য স্পিকার-সহ ১৪ জনকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। টুকি তখন বিধানসভায় তালা ঝুলিয়ে দেন। সেখানে ঢুকতে না পেরে পুল ২৪ জন বিধায়ককে নিয়ে একটি কমিউনিটি হল ও হোটেলের কনফারেন্স রুমে অস্থায়ী বিধানসভা অধিবেশন বসিয়ে স্পিকারকে অপসারণ করেন। টুকির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে পুলকে নেতা নির্বাচিত করা হয়। এর বিরুদ্ধে টুকি-রাবিয়ার মামলায় গুয়াহাটি হাইকোর্ট রাজ্যপালের নির্দেশ ও অস্থায়ী বিধানসভায় নেওয়া সব সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেয়। একই মত নেয় সুপ্রিম কোর্টও। সাংবিধানিক সঙ্কটে রাজ্যে ২৫ জানুয়ারি জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ায় পুল সরকার গড়েন।
আজকের রায়ের পর টুকি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র ও সংবিধানকে হত্যা করে রাজ্যপালের সাহায্যে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল বিজেপি।’’ কিন্তু এখনও আশা রেখে পুল বলেন, ‘‘নাবাম টুকি আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন না। সংখ্যা তাঁর সঙ্গে নেই।’’
আরও পড়ুন: চিন সাগর নিয়ে প্যাঁচে বেজিং, সতর্ক দিল্লি