অক্ষয়ের আর্জি খারিজ, নির্ভয়ায় বহাল মৃত্যুদণ্ডই

নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও খুন করার জন্য শীর্ষ আদালত তাকে যে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল, ২০১৭ সালের সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল অক্ষয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৪
Share:

খুশি: সুপ্রিম কোর্ট অক্ষয় ঠাকুরের আর্জি খারিজ করার পরে নির্ভয়ার মা। বুধবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত অক্ষয় ঠাকুরের ফাঁসির সাজা বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। নির্ভয়া-রায় পুনর্বিবেচনার জন্য অক্ষয়ের আর্জি আজ খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ। গত বছরের জুলাইয়ে দোষী সাব্যস্ত আরও তিন জন, পবন গুপ্ত, মুকেশ সিংহ ও বিনয় শর্মার আর্জিও একই ভাবে খারিজ করে দিয়েছিল কোর্ট। এর ফলে নির্ভয়া মামলার চার জন ফাঁসির আসামির সামনে সুপ্রিম কোর্টে রায় সংশোধনের জন্য আবেদন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোর রাস্তাই খোলা রইল।

Advertisement

নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও খুন করার জন্য শীর্ষ আদালত তাকে যে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল, ২০১৭ সালের সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল অক্ষয়। আজ বিচারপতি আর ভানুমতীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রায় পুনর্বিবেচনার প্রশ্ন নেই। কারণ, অক্ষয় যে প্রশ্নগুলি তুলেছে, শীর্ষ আদালত ইতিমধ্যেই তা বিচার করে দেখেছে। সব দিক বিবেচনা করেই ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূল রায়ে এমন কোনও ভুল দেখা যাচ্ছে না যে তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আর অক্ষয় যে সব যুক্তি দিচ্ছে, দোষী সাব্যস্ত বাকি তিন জনও একই ধরনের যুক্তি দিয়েছিল। শীর্ষ আদালতে যা ইতিমধ্যেই খারিজ হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের অধিকার কে দেখবে?’ আদালতেই কেঁদে ফেললেন নির্ভয়ার মা

Advertisement

এই রায়ের পরেই অক্ষয়ের আইনজীবী এ পি সিংহ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানানোর জন্য তিন সপ্তাহ সময় চান। দিল্লি সরকারের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা পাল্টা বলেন, প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোর জন্য আইন অনুযায়ী এক সপ্তাহ সময় দেওয়ার কথা। বিচারপতিরা জানান, তাঁরা এ নিয়ে কোনও আদেশ দিচ্ছেন না। আর্জি জানানোর জন্য আইনে যত টুকু সময়ের কথা বলা হয়েছে, অক্ষয়রা তত টুকুই পাবে।

অক্ষয়ের আইনজীবী এ পি সিংহ নির্ভয়া মামলার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন অক্ষয়ের গ্রেফতারি এবং শনাক্তকরণ প্যারেড নিয়েও। বিচারপতিরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘শুনানি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আপনি পুরো তদন্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন কি?’’ সলিসিটর জেনারেল মন্তব্য করেন, ‘‘ধর্ষিতা নির্ভয়াকে রক্ষা করতে না পারা আর পাঁচটি দস্যুকে সৃষ্টি করার জন্য হয়তো ঈশ্বরেরও মাথা নুয়ে পড়েছিল লজ্জায়।’’ তাঁর যুক্তি, ফরেন্সিক ও ডিএনএ পরীক্ষার ফল নির্ভয়ার ধর্ষণ-খুনে অক্ষয়ের ভূমিকাকে নিশ্চিত করেছে।

নির্ভয়া মামলায় রাজনৈতিক ও সংবাদমাধ্যমের তরফে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ আনেন এ পি সিংহ। তেলঙ্গানায় পশু চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পুলিশি এনকাউন্টারের প্রসঙ্গ টানেন তিনি। নির্ভয়ার বন্ধু ও ওই ঘটনার একমাত্র সাক্ষীর উপরে একটি স্টিং অপারেশনের প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করেন, সাকেত আদালতে মামলা যখন চলছে, তখন বিভিন্ন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন ওই যুবক। তিহাড় জেলের প্রাক্তন আধিকারিকের লেখা, সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে অক্ষয়ের আইনজীবীর যুক্তি, জেলের ভিতরে অভিযুক্ত রাম সিংহের আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সেখানে। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়েও গাফিলতির কথা বলেছিলেন ওই আধিকারিক। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘মামলা নির্ধারিত হয় আদালতের সামনে থাকা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কে কোন বইয়ে কি লিখেছেন, তার ভিত্তিতে আমরা চলতে পারি না। মামলা শেষ হওয়ার পরে কেউ যদি বই লিখে এ সব বলেন, সেটা বিপজ্জনক প্রবণতা।’’

শীর্ষ আদালতে হাজির ছিলেন নির্ভয়ার বাবা-মা। রায়কে স্বাগত জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নির্ভয়ার মা। তবে দ্রুত ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্য দিল্লির পাটিয়ালা হাউস আদালতে তাঁর আর্জি নিয়ে আজও ফয়সালা না হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শীর্ষ আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার জন্য বিচারক সতীশকুমার অরোরা শুনানির দিন ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। আদালতের ভিতরেই নির্ভয়ার মা কান্নায় ভেঙে পড়লে বিচারক বলেন, ‘‘আপনার প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছ। ...তবে অন্য পক্ষের অধিকারের কথাও ভাবতে হবে।...আইনে বাঁধা রয়েছি আমরা।’’ পরে নির্ভয়ার মা বলেন, ‘‘দোষীদের সুযোগ মিলছে। তাদের অধিকারের কথা ভাবা হচ্ছে। আমাদের অধিকার কোথায়?’’

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত মুকেশ সিংহের আইনজীবী কে এল শর্মা আজই জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় সংশোধনের জন্য আর্জি জানাতে চলেছে তাঁর মক্কেল। দিল্লির আদালতও তিহাড় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছে, দোষীরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানাবে কি না, এক সপ্তাহের মধ্যে তা জেনে নিয়ে আদালতকে জানাতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement