সুপ্রিম কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
১৮ মাস জেলবন্দি এক অভিযুক্তের বিচারপ্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। সেই অভিযুক্তের জামিন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ল ইডি। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, কোনও অভিযুক্তকে কি দীর্ঘদিন বিচার ছাড়াই জেলে আটকে রাখা যায়? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকায় বিরক্ত প্রকাশ করল বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
বুধবার ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা প্রেম প্রকাশ নামে এক ব্যক্তির জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। তাঁর দাবি, তাঁকে ১৮ মাস ধরে বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তির গ্রেফতারির ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থাকে চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিতে হয়। যদি সেই চার্জশিট জমা না পড়ে তবে ধৃত ব্যক্তি সরাসরি জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেই নিয়মেই প্রেম সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করেন। উল্লেখ্য, অবৈধ খনি মামলায় প্রেমকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি।
ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টে প্রেমের জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পরেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ইডি এই মামলায় শুধুমাত্র সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা করেছে। এখনও চূড়ান্ত চার্জশিট দিতে পারেনি। তাই বিচারপ্রক্রিয়া (ট্রায়াল) শুরু হয়নি। তা হলে কেন তাঁর মক্কেলকে এ ভাবে জেলে আটকে রাখা হবে, বুধবারের শুনানিতে সেই প্রশ্নই তোলেন প্রেমের আইনজীবী।
বিচারপতি খান্নার বেঞ্চ আবেদনকারীর সুরেই তদন্তকারী সংস্থার কাছে জানতে চায় কোন যুক্তিতে আটকে রাখা হচ্ছে প্রেমকে। বুধবার ইডির তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর-জেনারেল এসভি রাজু আদালতে দাবি করেন, প্রেম প্রভাবশালী। জেলের বাইরে গেলে তিনি তদন্তে প্রভাবিত করতে পারেন। যা শুনে বিচারপতি খন্না তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘যদি তিনি (প্রেম প্রকাশ) তেমন কোনও কাজ করেন, তবে আপনারা আমাদের কাছে এসে জানান।’’ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র এই যুক্তিতে কাউকে দিনের পর দিন বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখা যায় না।
তিনি আরও বলেন, ‘‘এক জন ১৮ মাস কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এটি আমাদের বিরক্তির উদ্রেক করছে। আপনি কাউকে গ্রেফতার করলে, তার পরেই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি।’’ পাশাপাশি সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলেও জানান বিচারপতি।
গত বছর এপ্রিল মাসে এই একই ধরনের পর্যবেক্ষণ ছিল সুপ্রিম কোর্টের। বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারি এবং বিচারপতি সিটি রবিকুমারের বেঞ্চও ইডির ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে ছিল, ‘‘তদন্ত শেষ না করে একটি তদন্তকারী সংস্থা ধৃত অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করতে পারে না।’’