গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
অন্য বিচারকদের তুলনায় কম মামলার নিষ্পত্তি করছেন তাঁরা। এই অভিযোগ তুলে নিম্ন আদালতের ছয় মহিলা বিচারককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। কিন্তু এক বিচারকের শারীরিক সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে জানার পর হাই কোর্টের সিদ্ধান্তের নিন্দা করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘‘যদি পুরুষেরাও ঋতুমতী হতেন, পুরুষদেরও ঋতুস্রাব হত, তখনই হয়তো সমস্যাটা বুঝতেন তাঁরা।’’
মধ্যপ্রদেশে ছয় মহিলা বিচারককে বরখাস্ত করার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে গত সেপ্টেম্বরে চার বিচারককে পুনর্বহাল করা হয়েছে। সম্প্রতি বিচারক অদিতি শর্মা এবং বিচারক সরিতা চৌধরির মামলা উঠেছিল বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি এন কোটেশ্বর সিংহের বেঞ্চে। বিচারক শর্মা ২০১৮ সালে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বিচারক চৌধরি মধ্যপ্রদেশের বিচারব্যবস্থার অন্দরে ঢোকেন ২০১৭ সালে। তাঁদের কেন দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে, এ সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টে মুখবন্ধ খামে চিঠি দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। সেখানে এক বিচারক সম্পর্কে শীর্ষ আদালত জানতে পারে, যে সময়ে তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তার কিছু দিন আগে ওই বিচারকের গর্ভপাত হয়। শারীরিক এবং মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি। তার পরেও তাঁর উপরে নেমে আসা ‘শাস্তির খাঁড়া’ নিয়ে বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, ‘‘একটি মামলাকে শেষ বলে সকল পক্ষকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া সহজ কাজ। কিন্তু এই মামলাটি যদি আমরা সবিস্তার শুনব বলি, আইনজীবীরা কি আমাদের ধীর গতির বলবেন? বিশেষত, কোনও মহিলা বিচারক, যিনি শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁকে মন্থর গতির বলে বরখাস্ত করে দিতে পারেন না।’’
হাই কোর্টের তরফের আইনজীবী জানান, বিচারক শর্মার কাজের ‘রেটিং’ কী ভাবে ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হয়েছে। তিনি জানান, ২০২২ সালে মোট ১৫০০ মামলা ঝুলে ছিল বিচারক শর্মার এজলাসে। তিনি নিষ্পত্তি করেছেন মাত্র ২০০টি মামলা। কারণ হিসাবে বিচারক হাই কোর্টকে জানিয়েছিলেন, তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তাঁর গর্ভপাত হয়েছে। ওই বছরেই তাঁর ভাইয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে তিনি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এ সব নিয়ে সওয়াল শুরু হতেই বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, ‘‘এই রকম নিয়ম পুরুষ বিচারপতি এবং আধিকারিকদের জন্যও করুন। দেখা যাক, কে কোথায় দাঁড়ান।’’
সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে, কী ভাবে জেলা দায়রা আদালতের বিচারকদের ‘টার্গেট’ বেঁধে দেওয়া হয়? বিচারক শর্মার হয়ে মামলাটি লড়ছিলেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। তিনি সওয়াল করেন, ‘‘আমার মক্কেলের কাজের রেকর্ড অনবদ্য। কিন্তু পেশার জায়গায় তিনি বেশ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েন। ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যার মধ্যে ছিলেন।’’
সব পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে যেন দুই বিচারককে বরখাস্তের কারণ এবং ব্যাখ্যা স্পষ্ট ভাবে থাকে।