ভারত আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ চায় না। কিন্তু যদি আঘাত আসে, তা হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকার প্রশ্ন নেই। সে ক্ষেত্রে শত্রুকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য কঠোর প্রত্যাঘাতের পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
আর সেই প্রস্তুতির অন্যতম ‘স্তম্ভ’ সুখোই। ভারতীয় বায়ুসেনার তুখোড় বোমারু। যে রুশ ফাইটারকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হানাদার বিমান হিসেবে ধরা হয়। অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ভারতের সফল ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর প্রেক্ষাপটে তার গুরুত্ব এখন অপরিসীম। সেনাকর্তাদের পর্যবেক্ষণ— পাকিস্তান ‘অপমানের’ শোধ তুলতে চাইতেই পারে। তেমনটা হলে পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা পশ্চিম সীমান্তে। সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় ওখানে সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের বাড়তি স্কোয়াড্রন মোতায়েন করা হয়েছে।
সেনা-সূত্রের খবর: উত্তরপ্রদেশের বরেলী থেকে সুখোইয়ের দু’টো স্কোয়াড্রনকে ইতিমধ্যে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লুধিয়ানার কাছে হালওয়াড়া বিমানঘাঁটিতে। প্রসঙ্গত, পূর্ব সীমান্তে চিনের হানাদারি ঠেকানোর লক্ষ্যেই মূলত বরেলীর সুখোই স্কোয়াড্রনকে তৈরি রাখা হয়। কিন্তু আশু কৌশলগত (স্ট্র্যাটেজিক) কারণে বরেলীর দু’টি সুখোই ইউনিট (প্রায় ৪০টি যুদ্ধবিমান) এই মুহূর্তে হালোয়াড়ে ঘাঁটি গেড়েছে। ইউনিটের সমস্ত অফিসারকে আপাতত মাস তিনেকের জন্য পাঠানো হয়েছে পাক সীমান্তে। পাশাপাশি রাজস্থানের জোধপুরেও অন্তত তিন মাসের জন্য মজুত করা হয়েছে সুখোইয়ের অতিরিক্ত স্কোয়াড্রন। ‘‘পশ্চিম ফ্রন্টে আমরা পুরোপুরি তৈরি। পাকিস্তানের যে কোনও রকম বেচাল দেখলেই মুখের মতো জবাব দেওয়া হবে।’’— মন্তব্য এক বায়ুসেনা-আধিকারিকের।
প্রতিরক্ষা-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অসমের তেজপুর, ছাবুয়া ও উত্তরপ্রদেশের বরেলীর তিনটি ঘাঁটিতে সুখোই-বহরকে সদা সতর্ক রাখা হয় চিনের মোকাবিলায়। কারণ, তিব্বতের স্বশাসিত অঞ্চলে চিন আট-আটটা বিমানঘাঁটি তৈরি করেছে। তা থেকে অন্তত একুশটি ফাইটার স্কোয়াড্রন প্রায় চোখের পলকে ভারতীয় আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার ক্ষমতা রাখে। উপরন্তু কুইনঘাই-তিব্বত অঞ্চলে চিনারা সুখোই-২৭৪বিকে ও সুখোই-এমকেকে নিয়ে হামেশা মহড়া চালিয়ে থাকে। পাল্টা হিসেবে ভারত ২০১০-এর অগস্টে তেজপুরে ও ২০১১-র মার্চে ছাবুয়ায় দু’টো সুখোই স্কোয়াড্রন মোতায়েন করেছে। পিছন থেকে সাহায্য করতে তৈরি থাকে বরেলীর দু’টি স্কোয়াড্রন।
অন্য দিকে পাক-আক্রমণ ঠেকাতে পশ্চিম সীমান্তের জোধপুরে ২০১১-য় সুখোইয়ের ইউনিট বানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সুখোইয়ের ‘বেস’ করা হয়েছে হালওয়াড়ার পুরনো ঘাঁটিকে। ১৯৬৫ ও ৭১-এর যুদ্ধে হালওয়া়ড়া থেকেই পাকিস্তানের মাটিতে ধারাবাহিক আকাশ-হানা চালানো হয়েছিল। পাক মোকাবিলায় হরিয়ানার সিরসাতেও সুখোই-ঘাঁটি তৈরি হয়েছে। তবে সেটি পুরোপুরি কাজে লাগতে আরও বছরখানেক।
এমতাবস্থায় হালওয়াড়া ও জোধপুরে এখন সাজ সাজ রব। আপাতত বরেলীরও মূল ‘টার্গেট’ পাক সীমান্ত। আর সুখোই বহরের প্রধান বেস, অর্থাৎ পুণের লোহেগাঁওকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে পূর্ব বা পশ্চিম— যে কোনও সীমান্তে দুশমন মোকাবিলার জন্য। উত্তর ও পশ্চিমের প্রতিটি বায়ুসেনা ঘাঁটিকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
পাকিস্তানের তরফে তোড়জোড় কী রকম?
গত দু’সপ্তাহ ধরে করাচি, লাহৌর, কোয়েটা ও পেশোয়ারে টানা মহড়া চালাচ্ছে পাক বিমানবাহিনী। পুরোভাগে মার্কিন এফ-১৬ ও চিনা জেএফ-১৭। এমনকী, ‘হাইমার্ক’ নামাঙ্কিত মহড়ায় পাক জঙ্গি বিমান নামানো হয়েছে খাস ইসলামাবাদ-লাহৌর মোটরওয়েতে। ভারত অবশ্য প্রত্যয়ী। বায়ুসেনার এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘সুখোই-৩০ আমাদের সেরা হানাদার। আকাশ থেকে আকাশে, আকাশ থেকে মাটিতে নির্ভুল লক্ষ্যে মিসাইল ছুড়তে পারে। বোমা ফেলতেও এর জুড়ি মেলা ভার।’’
রাশিয়ার সঙ্গে ২০০০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক ভারত ২৭২টি সুখোই পাবে। দু’শোটি এসে গিয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে বাকিগুলো চলে আসার কথা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের খবর: শুধু সুখোই-৩০ দিয়েই ১৭টি স্কোয়াড্রন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। পরে ধাপে ধাপে জুড়বে ৩৬টি ফরাসি রাফাল।
এই মুহূর্তে অবশ্য নজরের কেন্দ্রে সুখোই। সঙ্কেত পেলেই ছিলে ছেঁড়া তিরের মতো উড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় পশ্চিম সীমান্তে তারা টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে। অন্তত একশো দিন সে ভাবেই থাকবে।