ভাগ নেবো না কলঙ্কের

নেত্রীর নির্দেশেও ধর্নায় নেই সুগত-দীনেশ

দলের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন গত কাল। আর আজ প্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিলেন, নারদ-ভিডিও নিয়ে দল যা অবস্থান নিয়েছে, তাতে তাঁদের ঘোর আপত্তি। ঘুষ-কাণ্ডে নাম উঠে আসা নেতাদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়াতে তাঁরা নারাজ।গোপন ভিডিওয় দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের টাকা নিতে দেখার ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। এ নিয়ে সংসদে কী ভাবে চলতে হবে তা নিয়ে সাংসদদের পাখিপড়া করাতে গত কাল তড়িঘড়ি ডেরেক ও’ব্রায়েনকে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরেই তৃণমূল সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন ডেরেক।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

বুধবার সংসদ চত্বরে তৃণমূলের ধর্না। কিন্তু গরহাজির সুগত বসু ও দীনেশ ত্রিবেদী। তৃণমূল সূত্রের খবর, কারণ নারদ-কাণ্ডে নাম জড়ানো সুলতান আহমেদ, মুকুল রায় এবং সৌগত রায়ের উপস্থিতি। ছবি: পিটিআই।

দলের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন গত কাল। আর আজ প্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিলেন, নারদ-ভিডিও নিয়ে দল যা অবস্থান নিয়েছে, তাতে তাঁদের ঘোর আপত্তি। ঘুষ-কাণ্ডে নাম উঠে আসা নেতাদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়াতে তাঁরা নারাজ। গোপন ভিডিওয় দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের টাকা নিতে দেখার ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। এ নিয়ে সংসদে কী ভাবে চলতে হবে তা নিয়ে সাংসদদের পাখিপড়া করাতে গত কাল তড়িঘড়ি ডেরেক ও’ব্রায়েনকে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরেই তৃণমূল সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন ডেরেক। কিন্তু সেখানেই ক্ষোভ উগরে দেন সুগত বসু এবং দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁরা বলেন, এই ঘটনায় তৃণমূলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাচ্ছে। অস্বস্তি বাড়ছে জনসমাজে। কিন্তু সেই বক্তব্য গ্রাহ্য করেননি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁরাও যে মচকাননি তা বুঝিয়ে দিয়ে আজ সংসদ চত্বরে ধর্নায় গরহাজির রইলেন দুই সাংসদই।

Advertisement

অথচ আধার বিল নিয়ে সরকারি অবস্থানের বিরোধিতা করে সাংসদদের বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মমতা। সেই মতো সকাল সাড়ে দশটায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হয়েছিলেন ডেরেক, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যারা। কিন্তু সুগতবাবু ও দীনেশবাবু আসেননি। আর ছিলেন না যোগেন চৌধুরী। তিনি অবশ্য আগেই দলকে জানিয়েছিলেন যে অসুস্থতার কারণে আসতে পারবেন না। কিন্তু বাকি দু’জন কিছুই জানাননি বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।

রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক পরে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ সুরে বলেন, ‘‘গত কাল বারবার বলা সত্ত্বেও আমাদের দুই সাংসদ ধর্নায় অনুপস্থিত ছিলেন। কেন আসেননি, তার কারণও জানানো হয়নি। বিষয়টি আমরা দলীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, সুগত-দীনেশ প্রসঙ্গ মমতাকে জানানো হয়েছে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

দলের ধর্নায় কেন অনুপস্থিত ছিলেন? এ ব্যাপারে দীনেশবাবুর বক্তব্য রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও জানা যায়নি। তবে সুগতবাবু বলেন, ‘‘কী নিয়ে ধর্না হবে, সে ব্যাপারে আমি অন্ধকারে ছিলাম। তাই থাকতে পারিনি। দলকে তা জানিয়ে দিয়েছি।’’ সেই বক্তব্য খণ্ডন করে ডেরেক বলেন, ধর্নায় বিষয় সব সাংসদকে জানানো হয়েছিল এবং সুগতবাবুর অনুপস্থিতির বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়নি।

তৃণমূল সূত্র বলছে, বিষয়টি নিছক সাংসদদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব নয়। এ দিনের ধর্নায় এমন তিন জন ছিলেন, টাকা নেওয়ার সূত্রে যাঁদের ছবি দেখা গিয়েছে গোপন ভিডিওতে। এঁরা হলেন মুকুল রায়, সৌগত রায় ও সুলতান আহমেদ। এঁদের সঙ্গী হয়ে ধর্নায় দাঁড়াতে চাননি সুগতবাবু। গত কাল বৈঠকেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তিনি বলেছিলেন, যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তার দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে। এই কেলেঙ্কারির হ্যাপা তিনি বা অন্য সাংসদরা পোহাবেন কেন!

এখানেই না-থেমে সুগতবাবু আরও বলেন, তিনি অধ্যাপক। তাঁর মা পেনশন পান। ফলে উপার্জনের সমস্যা তাঁর নেই। অন্যের কুকাজের দায় নেওয়ার কোনও প্রয়োজনও তাঁর নেই। তেমন হলে তিনি নিজে মমতার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান যাদবপুরের সাংসদ। সুগতবাবুর এই মন্তব্যকে সমর্থন করেন দীনেশ ত্রিবেদী। তিনিও বলেন, এই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ফিকে হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।

তাঁদের মতামতকে আমল দেননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। নিজেদের অসন্তোষ চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেননি দুই সাংসদও। গত কাল লোকসভায় সৌগত রায় ও সুলতান আহমেদ যখন সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন, তখন চুপচাপ বসেছিলেন দীনেশবাবু এবং সুগতবাবু। এক বারও সতীর্থদের পাশে দাঁড়াননি।

তার মানে কি নারদ-কাণ্ডে দলে ফাটল ধরল? ডেরেকের দাবি, ‘‘গোটা দল ঐক্যবদ্ধ।’’ তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে অবশ্য অন্য কথা শোনা যাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ মহলে সুগতবাবু জানিয়েছেন, তাঁর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। যে আদর্শের কথা মাথায় রেখে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে মেলাতে পারছেন না। নীতিহীনতার সঙ্গে এতটা আপস করা সম্ভব হচ্ছে না তাঁর পক্ষে।

অন্য দিকে দীনেশবাবুও দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কারণে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ। সময়ে অসময়ে সেই ক্ষোভ তিনি চাপা রাখেননি। ক্ষোভের তালিকার সাম্প্রতিকতম সংযোজন, বিধানসভা ভোটে নিজের নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীদের টিকিট বিলিকে কেন্দ্র করে। গোটা প্রক্রিয়াটিতে দীনেশবাবুকে কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছিল। মমতার নির্দেশে রেলমন্ত্রীর পদ খোয়ানোর পর থেকে দলকে দফায় দফায় অস্বস্তিতে ফেলা দীনেশবাবু আরও একটা সুযোগ হাতছাড়া করলেন না বলেই অনেক তৃণমূল নেতার অভিমত।

এখন প্রশ্ন হল, যে আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে, তা কি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে? এটা ঘটনা যে তৃণমূলের তরুণতর সাংসদেরা নারদ-কাণ্ডে অখুশি। প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন মুনমুন সেনও। তিনি বিষয়টিকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দেওয়ায় সৌগতবাবু রেগে যান। কিন্তু মুনমুন তাঁকে সাফ জানান, এই ঘটনা যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তা হলে তা লজ্জাজনক বলেই তিনি মনে করেন। অনুপম হাজরা, সংঘমিত্রা মুমতাজের মতো নেতারাও যথেষ্ট অখুশি বলেই জানা গিয়েছে। অবশ্য সুগতবাবু বা দীনেশবাবুর মতো অসন্তোষ আপাতত প্রকট করে দিচ্ছেন না তাঁরা। পরে কী হবে, তা সময়ই বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement