দীর্ঘ টালবাহানার পরে আজ আঞ্চলিক রুটে বিমান যোগাযোগ বা ‘উড়ান’ প্রকল্পে মউ স্বাক্ষর করল পশ্চিমবঙ্গ। এর ফলে কলকাতা থেকে ছোট ছোট রুটে যারা উড়ান চালাবে, তারা কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফ থেকে ভর্তুকি পাবে।
রাজ্যের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে শর্ত মেনে টাকা দেয় না দিল্লি। কখনও আবার মাঝপথে নতুন শর্ত আরোপ করে। টাকা পেতে সমস্যা হয় রাজ্যের। এ বার ঠিক হয়েছে, এই প্রকল্পে যদি কোনও শর্ত দেখিয়ে কেন্দ্র অনুদান দেওয়ার প্রশ্নে বাধা সৃষ্টি করে, তা হলে ওই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার অধিকার থাকবে রাজ্যের হাতে।
শুক্রবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় বিমান প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা, মন্ত্রকের সচিব রাজীবনারায়ণ চৌবে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান গুরুপ্রসাদ মহাপাত্রের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে রাজ্যের শর্ত মেনে নেয় কেন্দ্র।
রাজ্যের আশা এ বার কোচবিহার, অন্ডাল, বালুরঘাট বা মালদহের মতো ছোট বিমানবন্দরগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। কলকাতা থেকে নিয়মিত ভাবে সেগুলির মধ্যে উড়ান পরিষেবা শুরু করা যাবে। এ দিন ফোনে গুরুপ্রসাদ মহাপাত্র জানান, যে শহর থেকে এখনও উড়ান চালু হয়নি, বা যে শহর থেকে দিনে দু’-তিনটি উড়ান চলে সেগুলিই আঞ্চলিক শহর হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই শহর থেকে যে কোনও শহরে, এমনকী মেট্রো শহরে উড়ান চালালেও তাকে আঞ্চলিক রুট হিসেবে গণ্য করা হবে।
প্রধান রুট
• কলকাতা-দিল্লি
• কলকাতা-মুম্বই এর মতো দুই প্রধান শহরের মাঝের উড়ান
লেভি দিতে হবে
• ১ হাজার কিলোমিটার বা কম দূরত্ব ৭৫০০ টাকা
• ১ থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্ব ৮০০০ টাকা
• দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব ৮৫০০ টাকা
আঞ্চলিক রুট
• কলকাতা-কোচবিহার
• কলকাতা-অন্ডাল
• এক ঘণ্টার উড়ানের অর্ধেক আসনের টিকিট ২৫০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি নয়
• সামগ্রিক ভাবে বিমানের টিকিট ১৪২০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে
• আঞ্চলিক রুটে আধ ঘণ্টার হেলিকপ্টার ভাড়া ২৫০০
• এক ঘণ্টার হেলিকপ্টারের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫০০০
এ দিনই চৌবে জানান, কলকাতা-দিল্লি, কলকাতা-মুম্বই রুটের মতো দেশের প্রধান রুটগুলিতে বিমান চালালে এ বার কেন্দ্রকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। তা দেবে বিমানসংস্থাগুলি। সারা বছর ধরে কেন্দ্র এ ভাবে যত টাকা পাবে, সেই টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হবে সেই সব বিমানসংস্থাগুলিকে, যারা আঞ্চলিক রুটে বিমান চালাবে। এর অর্থ, কলকাতা-দিল্লি রুটে উড়ান চালানোর জন্য এক দিকে ইন্ডিগোকে যেমন অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে, তেমনই তারা যদি কলকাতা থেকে অন্ডালে উড়ান চালায়, তার জন্য সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকিও পাবে।
দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-কলকাতার মতো শহরের মাঝে উড়ান চালালে এ বার থেকে অতিরিক্ত এই লেভি দেওয়ার জন্য বিমান টিকিটের দামও বাড়বে বলে আশঙ্কা। কারণ, কেন্দ্রকে দেয় লেভি যাত্রীদের কাছ থেকেই তুলতে চাইবে বিমানসংস্থাগুলি।
কেন্দ্রের আশা এ ভাবে সারা দেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৪০০ কোটি টাকা তোলা যাবে। এই টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হবে আঞ্চলিক রুটের জন্য। এই টাকা সমস্ত ভর্তুকির ৮০% হিসেবে ধরা হবে। বাকি ২০% ভর্তুকি দেওয়ার কথা রাজ্যের। ঠিক যে চুক্তি এ দিন কেন্দ্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের হয়েছে। কেন্দ্রের সাম্প্রতিক প্রকল্প — ‘উড়ে দেশ কা আম নাগরিক’-এর জন্য বছরে ৫০০ কোটি টাকার এই রিজিওনাল কানেক্টিভিটি ফান্ড তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান চৌবে।
সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিমান পরিষেবা চালুর জন্য অনেক দিন ধরেই তৎপর জুম এয়ারলাইন্স। এ দিনের বৈঠকে ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইন্ডিগো বিমানসংস্থার কর্ণধার আদিত্য ঘোষের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। জুম এয়ারলাইন্সের ছাড়পত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।