সোমবার থেকে রাজ্যে সাত দিনের ধর্মঘট পালন করে চলেছেন পুরকর্মীরা। এতে অন্যান্য শহরের সঙ্গে শিলচরও নাজেহাল।
জঞ্জালের পাহাড় জমছে। চার দিন ধরে নালা-নর্দমা সাফ হচ্ছে না। বৃষ্টির জল উপচে বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। বন্ধ গাঁধীবাগ পার্কও। বেশি বিপাকে যারা এনআরসি-র ফর্ম পূরণের জন্য জন্ম বা মৃত্যুর শংসাপত্র চেয়ে আবেদন করেছিলেন। পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর জানিয়েছেন, জঞ্জাল নিষ্কাশনের কাজকর্ম অব্যাহত রাখার আবেদন জানানো হয়েছিল। পুরকর্মীরা মানতে রাজি হয়নি। সারা অসম পৌর কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ননী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটি রাজ্য পর্যায়ের আন্দোলন। শিলচর পৃথক কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ ছাড়া, জঞ্জাল নিষ্কাশনের কাজ করে গেলে আন্দোলনে চাপ সৃষ্টি হবে কোথায়!’’ ননীবাবু জানান, ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অসমের পুর কর্মচারীদের চাকরি প্রাদেশিকীকরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এতে অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতই সুযোগ-সুবিধৈ ভোগ করবেন তাঁরা। আড়াই বছরেও মন্ত্রিসভার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। অর্থ ও আইন বিভাগ এখনও তাতে অনুমোদন জানায়নি। পরিবর্তন বলতে, এত দিন পুরসভা যে বেতন দিচ্ছিল, তা এখন রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে আসছে। তাতে পুরসভার অর্থের সাশ্রয় হলেও কর্মচারীদের লাভ হয়নি। আগামী ১০ অগস্ট বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। পুরকর্মীদের দাবি, এই অধিবেশনে তাঁদের দাবি আদায় করতে হবে। না হলে আগামী বছর বিধানসভার নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত ঝুলে যেতে পারে।
ফেডারেশন সহ পুরকর্মীদের তিনটি সংগঠন একযোগে এই আন্দোলন করে চলেছে। অন্য দুটি সংগঠন হল--সারা অসম পৌর কর্মচারী সঙ্ঘ এবং পৌর কর্মচারী সমিতি। সঙ্ঘের সম্পাদক মধুসূদন শুক্লবৈদ্য এবং সমিতির সম্পাদক অলকেশ রায়ও একই সুরে জানান— চার দিনে সরকারের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। ফলে সাত দিন পর বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে। ননীবাবু জানান, শনিবার গুয়াহাটিতে রাজ্য কার্যবাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। পর দিন হবে সমস্ত পুরসভা ও টাউন কমিটির কর্মচারী প্রতিনিধিদের বৈঠক। সেখানেই চূড়ান্ত হবে পরবর্তী আন্দোলন সূচি। এ দিকে, শিলচরের পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর, উপ-প্রধান চামেলি পাল এবং বিজেপি পুর-সদস্য রাজেশ দাস ও অভ্রজিৎ চক্রবর্তী আজ আন্দোলনরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা পুরকর্মীদের দাবি যৌক্তিকতা স্বীকার করেন। নীহারবাবু জানান, তিনি শনি বা রবিবার বরাক উপত্যকার পুরপ্রধানদের বৈঠক ডাকবেন। সবাই সম্মত হলে তাঁদের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকপত্র পাঠানো হবে। ননীবাবু বলেন, ‘‘শিলচর বার লাইব্রেরিও এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছেন।’’
রাজ্য সরকারের টনক না নড়লেও পুরকর্মীদের শিলচর শহরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। রাস্তাঘাটে জঞ্জাল বেড়ে চলেছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এরমধ্যে কয়েক দিন থেকে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। নালা-নর্দমা অপরিষ্কার থাকায় অতিরিক্ত জল বইতে পারছে না। নর্দমা উপচে বহু এলাকায় জল বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। বিজেপি পুরবোর্ড কয়েক দিন সব সহ্য করে চলতে নাগরিকদের কাছে অনুরোধ করেছে। কংগ্রেস পুর পরিষদীয় দলও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছে।