রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে মাসুদ আখতার ও তাঁর কন্যা। নিজস্ব চিত্র
রবিবার সকালে চশমা পরা ভদ্রলোক তাঁর সাউথ অ্যাভিনিউয়ের ৫৩ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে হাঁটতে হাঁটতে মাসুদ আখতারের সেলুনে চলে আসতেন। চুল ছাঁটিয়ে, গোঁফ-দাড়ি কামিয়ে, মাসুদের সঙ্গে খোশগল্প করে বাড়ি ফিরতেন। মুখে এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে থাকা কানপুরের সেই ভদ্রলোক তখন উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ।
বিজেপির সেই সাংসদ এক দিন বিহারের রাজ্যপাল নিযুক্ত হলেন। সাউথ অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হল। বিহারের রাজ্যপাল হিসেবে দিল্লির নর্থ অ্যাভিনিউয়ের ১৪৪ নম্বর ফ্ল্যাট তাঁর জন্য বরাদ্দ হল। দিল্লি এলে সেখানেই ডাক পড়ত মাসুদ ভাইয়ের। ক্ষুর-কাঁচি নিয়ে পৌঁছে যেতেন।
মাসুদ কি আর তখন জানতেন, টিভির পর্দায় বিশেষ দেখা না গেলেও এই রাজনীতিকই এক দিন দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবেন! সাউথ অ্যাভিনিউ লেন মার্কেটে ‘মাসুদ হেয়ার স্টাইল’-এর আয়নার সামনে চেয়ারে বসে দাড়ি কামিয়ে যাওয়া রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতির গদিতে বসবেন!
দিল্লিতে মাসুদের সেলুনের দেওয়ালে ঝুলছে সেই ছবি। নিজস্ব চিত্র
অভাবনীয় হলেও সত্যি এই ঘটনার পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। মাসুদ আখতারের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি এ বার রাষ্ট্রপতি ভবন ছেড়ে জনপথের বারো নম্বর বাংলোয় গিয়ে উঠবেন। দশ জনপথের ঠিক পাশের বাংলো। একেবারে সনিয়া গান্ধীর প্রতিবেশী। সেই বারো জনপথে ফের মাসুদের চুল-দাড়ি কাটতে যাওয়ার ডাক পড়বে।
মাসুদ বলেন, ‘‘বারো নম্বর জনপথের বাড়িতে অবশ্য আগেও গিয়েছি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই বাড়িতে রামবিলাস পাসোয়ান থাকতেন।তাঁর চুল কাটতে, দাড়ি ট্রিম করতে আমাকেই ডাকতেন। কোভিডের সময়ে সব বন্ধ হয়ে গেল। ছেলে চিরাগ বাড়িতেই ট্রিমার দিয়ে চুল-দাড়ি ছেঁটে দিতেন। তার পরে তো পাসোয়ান সাহেব দুনিয়া ছেড়েই চলেই গেলেন।’’
রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি হলেও মাসুদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি এমন নয়। এক বার সপরিবার, স্ত্রী, পুত্র, দুই কন্যাকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। ছোট মেয়ে বিদেশে চাকরি পাওয়ার পরেও মেয়েকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন। কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েও মাসুদকে ভোলেননি।
রাষ্ট্রপতি ভবনের সঙ্গে অবশ্য মাসুদের পরিবারের পুরনো সম্পর্ক। উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর থেকে মাসুদের পিতা সাব্বির দিল্লিতে ভাগ্যের সন্ধানে এসেছিলেন। ক্ষুর-কাঁচি নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ তাঁর কাছে ছাড়া আর কারও কাছে মাথা পাততেন না। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের দাড়ি ছাঁটতেও সাব্বিরের ডাক পড়ত। সেই সূত্রে লোহিয়াপন্থী নেতাদের সঙ্গে সাব্বির ও মাসুদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখনও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দিল্লি এসে মাসুদকেই বাড়িতে ডেকে নেন।
মাসুদ অবশ্য নিজে থেকে এ নিয়েমুখ খোলেন না। তবে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতিরসঙ্গে তাঁর ও মেয়ের ছবি ফ্রেমবন্দি করে সেলুনের দেওয়ালে ঝুলিয়েছেন। গালে শেভিং ক্রিম লাগাতে লাগাতে লাজুক হেসে বলেন, ‘‘আপনি যে চেয়ারে বসে, সেই চেয়ারে বসেই রাষ্ট্রপতি দাড়ি কামিয়ে গিয়েছেন!’’