National News

‘জনস্বার্থে’ বসানো হয়েছিল ২৬০০ কোটি টাকার মূর্তি! সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিলেন মায়াবতী 

হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভা দলিত নেত্রীকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন। ‘‘কীভাবে আমি তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারি?’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০০
Share:

নয়ডার একটি পার্কে এ ভাবেই বসানো হয়েছিল একাধিক মূর্তি। —ফাইল চিত্র

জনগণের করের টাকায় মূর্তি বসিয়ে নিজেকে জাহির করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তা বলে ২৬০০ কোটি টাকা খরচ করে এতমূর্তি! মায়াবতী সেটাই করেছিলেন ২০০৭ থেকে ২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন। সেই মূর্তি বিতর্কেই এ বার সুপ্রিম কোর্টে নিজের যুক্তি দিলেন মায়াবতী। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে রীতিমতো হলফনামা দিয়ে জানালেন, ওই মূর্তি বসানো হয়েছিল ‘জনস্বার্থে’, ‘জনগণের ইচ্ছায়’।এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কি হাসপাতাল, শিক্ষা বা অন্য কোনও জনকল্যাণের কাজে ব্যবহার করা যেত না? এই প্রশ্নের উত্তরে মায়াবতীর জবাব, সেটা ‘বিতর্কিত বিষয়’। দলিত ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে বিএসপি নেত্রীর প্রশ্ন, ‘‘অন্য কারও মূর্তিতে প্রশ্ন ওঠে না, শুধু দলিতদের মূর্তিতেই যত দোষ?’’

Advertisement

২০০৭ থেকে ২০১২। উত্তরপ্রদেশে এই পাঁচ বছরের বিএসপি শাসনকালে লখনউ নয়ডা-সহ রাজ্যের বহু পার্ক-উদ্যানে বসানো হয় বিশাল বিশাল দামি মূর্তি। সেগুলি ছিল মায়াবতীর নিজের, দলের প্রতিষ্ঠাতা কাঁসিরামের, বহুজন সমাজ পার্টির প্রতীক হাতির এবং বিভিন্ন দলিত নেতাদের। তার কোনওটি ব্রোঞ্জের, কোনওটি সিমেন্টের এমনকি, মার্বেল পাথরের মূর্তি পর্যন্ত ছিল। রাজকোষ থেকে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২৬০০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জনগণের দেওয়া করের টাকা এ ভাবে কেন খরচ করা হল। ওঠে দুর্নীতির অভিযোগও। এবং শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে মামলা দায়ের হয় মায়াবতীর বিরুদ্ধে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বেঞ্চ বলেছিল , প্রয়োজনে মূর্তি তৈরিতে খরচ হওয়া ওই টাকা ফেরত দিতে হবে মায়াবতীকে। তবে তার আগে মায়াবতীর কী বক্তব্য, সেটা জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই নির্দেশেই মঙ্গলবার লিখিত বক্তব্য জানালেন আদালতে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ধ্বংসাবশেষের কিছু টুকরো উপরে উঠছে, মহাকাশ স্টেশনের ক্ষতির শঙ্কা নাসার

আরও পডু়ন: বদনামের দীর্ঘশ্বাসে হাঁসফাঁস করছে মুজফ্‌ফরনগর দাঙ্গার উত্সভূমি কবাল

কী বলতে চেয়েছেন মায়াবতী? বিএসপি সুপ্রিমোর বক্তব্যের নির্যাস, জনগণের ইচ্ছাতেই ওই মূর্তিগুলি বসানো হয়েছিল। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভা দলিত নেত্রীকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন। ‘‘কীভাবে আমি তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারি?’’— বক্তব্য মায়াবতীর। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ওই মূর্তিগুলির জন্যসঠিক পদ্ধতিতে বাজেট পাশও হয়েছিল বিধানসভায়।’’ মায়াবতীর দাবি, সাধারণ মানুষ যাতে এই মূর্তিগুলি থেকে অনুপ্রেরণা পান, তার জন্যই ওই মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছিল।

মূলত দলিত সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া আদায় করতেই কাঁসিরামের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে তৈরি হয় বহুজন সমাজ পার্টি। সেই দলিত ভোটব্যাঙ্কে ভর করেই তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মায়াবতী। এখনও রাজনীতিতে তাঁর অন্যতম হাতিয়ার দলিত তাস। শীর্ষ আদালতের হলফনামাতেও সেই ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে ছাড়েননি বিএসপি নেত্রী। সর্দার বল্লভভাই পটেল, রাজীব গাঁধী, ইন্দিরা গাঁধী, এন টি রামারাও, জয়ললিতার মতো নেতা-নেত্রীদের উদাহরণ তুলে ধরে মায়াবতী প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘‘শুধু দলিত নেতা-নেত্রীদের মূর্তি বসালেই কেন প্রশ্ন ওঠে?’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নেতা-নেত্রী বা যদি এঁদের মণীষী-পণ্ডিত বলেও যদি ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও প্রশ্ন ওঠে, বিশাল বিশাল হাতির মূর্তিগুলি কেন বসানো হয়েছিল? বিএসপির প্রতীক হাতি। তা মাথায় রেখেই হাতিগুলির মূর্তি বসানো হয়েছিল বলে বিতর্ক তৈরি হয়। তবে সে কথা মানতে চাননি মায়াবতী। তাঁর জবাব, ওই মূর্তিগুলি বিএসপি-র প্রতীক নয়। ‘শুধুই স্থাপত্যকলা’র নিদর্শন হিসেবেই গজরাজের এতগুলি মূর্তি বসানো হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement