প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। -ফাইল ছবি।
নেহরু ভবন জুড়ে কংগ্রেসিদের ভিড়। জোর ফিসফাস, সে ভিড়েই ঘুরঘুর করছেন বিজেপি সরকারের ‘গোয়েন্দা’রা! দোতলার ঘরে প্রিয়ঙ্কা কী করছেন? কী বলছেন? প্রতিমুহূ্র্তের খবর রাখার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
গতকালই লখনউ শহরে প্রিয়ঙ্কা চোখধাঁধানো রোড-শো করেছেন রাহুল গাঁধীর সঙ্গে। তার পরেই রাতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, দুই উপমুখ্যমন্ত্রী, দল ও সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আলোচনার প্রধান বিষয়— প্রিয়ঙ্কা।
আগামিকালই কুম্ভে ডুব দিতে আসছেন খোদ অমিত শাহ। তার আগে আজ গোধরা থেকে তিনি খোঁচা দিয়েছেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে। নাম না করে বলেছেন, ভাইয়ের বিয়ে হয়নি বলে এখন বোন এসেছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন, কংগ্রেসে ক্ষমতার শীর্ষে গাঁধী পরিবারের বংশরক্ষা করতেই এই উদ্যোগ।
প্রিয়ঙ্কা কি তবে বেশ চিন্তায় ফেলেছেন বিজেপিকে? অস্বীকার করছেন না উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারা। তাঁদের প্রাথমিক হিসেব, মায়াবতী আর অখিলেশের জোট বিজেপির ভোট সম্ভাবনায় অনেকটাই জল ঢেলে দিয়েছে। তার উপরে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা জুটি উচ্চবর্ণ ভোটব্যাঙ্ক পুরোপুরি উদ্ধার করতে পারলে বিজেপি বড়সড় ধাক্কা খাবে। একই হাল হবে কংগ্রেস অন্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোটে দাঁত ফোটালে। অন্য দিকে, কংগ্রেস অখিলেশের সংখ্যালঘু, মায়ার দলিত ভোট কেড়ে নিতে পারলে বিজেপির লাভ!
আরও পড়ুন: ‘প্রধানমন্ত্রীর জেল হওয়া উচিত’, রাফালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে মন্তব্য রাহুলের
লাভ-ক্ষতির এই অঙ্ক অনেকটাই নির্ভর করছে, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা কোথায় কতটা আক্রমণাত্মক হচ্ছেন তার উপর। প্রকাশ্যে প্রিয়ঙ্কা এখনও কিছু না বললেও তাঁর ক্যারিশমা যে খেলার মোড় অনেকটা ঘুরিয়ে দিতে পারে, সে ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত বিজেপি। প্রিয়ঙ্কা গতকাল টুইটারে এলেও একটিও টুইট করেননি। কিন্তু প্রথম দিনেই ছাপিয়ে গিয়েছেন দলিতের ‘মসিহা’ মায়াবতীকে। এর পরে প্রিয়ঙ্কা যখন কুম্ভে যাবেন, জেলাওয়াড়ি সফর করবেন, তখন কী হবে? এসপি-বিএসপি’র সঙ্গে কোনও কোনও আসনে গোপন আঁতাঁত হবে না তো? এসব প্রশ্ন ভাবাচ্ছে বিজেপিকে।
প্রিয়ঙ্কা আসার পরেই বরুণ গাঁধীর কংগ্রেসে যোগদান নিয়েও ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে শর্ত হল, তাঁর মা, মন্ত্রী মেনকাকেও বিজেপি ছাড়তে হবে। রাজ বব্বরকে প্রশ্ন করা হয়, বরুণকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে? ঢোক গিলে তিনি বলেন, “আমার স্তরে এমন কিছু শুনিনি।” প্রিয়ঙ্কার সামনে অনেক কর্মী বলেছেন, সপা-বসপার সঙ্গে যেন জোট না হয়। প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, “যেমন চাইছেন, তেমন হবে।” তবে এ-ও জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে সব পদক্ষেপ করতে হবে। এসপি-বিএসপি’র জন্য দরজা খোলা রাখতে বলেছিলেন রাহুলও।
এসব সাত-পাঁচ ভেবে বিজেপি নজর রাখছে প্রিয়ঙ্কাদের গতিবিধির উপর। আপাতত স্থির হয়েছে, প্রিয়ঙ্কাকে সরাসরি বেশি আক্রমণ করা হবে না। তা না-হলে উল্টে পাটকেল খেতে হতে পারে। রাহুলকে নিশানা করা হবে, যেমন আজ অমিত করেছেন প্রিয়ঙ্কাকে জুড়ে দিয়ে, পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর প্রিয়ঙ্কা খুব বেশি আক্রমণাত্মক হলে বলা হবে, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী নন, বঢরা। দুর্নীতি তাঁর নামের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে।