প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি, ২১ অক্টোবর: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই অস্থির বাতাবরণে মঙ্গলবার রাশিয়াগামী বিমান উঠছেন প্রধানমন্ত্রী। উপলক্ষ, ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির শীর্ষ বৈঠক। তবে কূটনৈতিক শিবির বলছে, যে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীতে (ব্রিকস) ভারত, চিন এবং রাশিয়ার সর্বোচ্চ নেতারা রয়েছেন, সেখানে দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠকের সম্ভাবনা থাকে মূল ব্রিকস-কে ছাপিয়ে যাওয়ার। অনেক বারই এমনটা ঘটেছে।
এই মুহূর্তে ভূকৌশলগত পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে, বহুপাক্ষিক ব্রিকস বৈঠকের পাশাপাশি সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠক। পাশাপাশি চিনের সঙ্গে সীমান্ত সঙ্কটে যে অগ্রগতির দাবি আজ করেছে নয়াদিল্লি, এর পর চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে মোদীর সম্ভাব্য বৈঠকও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে।
ব্রিকস-এ যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর নিয়ে আজ সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি। জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং বহুপাক্ষিকতাকে শক্তিশালী করা ব্রিকস-এর কেন্দ্রীয় বিষয়। প্রধানমন্ত্রী ২২ তারিখ রাশিয়ার কাজ়ান শহরে পৌঁছবেন। পরের দিন রাতে বৈঠক এবং মূল সম্মেলনে যোগ দিয়ে ফিরে আসবেন দেশে কিছু জরুরি কাজ থাকার জন্য। তার পরের দিন অর্থাৎ ২৪ তারিখ ব্রিকস ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবে। ভারতের পক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
বিদেশসচিবের কথায়, “ব্রিকস গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে ভারত এই গোষ্ঠীর সব রকম সক্রিয়তা, উদ্যোগ এবং কাজকর্মে বরাবর শামিল থেকেছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, স্থায়ী উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক সংস্কারের মতো ক্ষেত্রগুলিতে ভারত এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে এবং উদার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্রিকস-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।”
বাণিজ্য এবং উন্নয়নের পাশাপাশি ইউক্রেন এবং পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতিও ব্রিকস-এর আলোচনায় আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, যে দেশগুলি ব্রিকস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত এই দেশগুলিতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশের বসবাস রয়েছে। আন্তর্জাতিক জিডিপি-র ২৪ শতাংশ এই দেশগুলি থেকে আসে। বিশ্বব্যাপী যে বাণিজ্য চলে, তার ১৬ শতাংশেরও বেশি এই দেশগুলিই করে।
ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্যে গত চার মাসে এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্বিতীয় রাশিয়া সফরকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত গত মাসেই আমেরিকা গিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন মোদী। অগস্ট মাসে সফর করেছেন ইউক্রেনেও। আজ বিক্রম মিশ্রি বলেন, “রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুতিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কির বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিক ভাবে ভারতের অবস্থাকেই তুলে ধরেছেন। তা হল, যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে কোনও সমাধান তৈরি হয় না। সংলাপ এবং কূটনীতির প্রয়োগেই শান্তির খোঁজ পাওয়া সম্ভব। আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সঙ্গে আমরা সমানে দৌত্য করে চলেছি।”
অন্য দিকে আজ দিল্লিতেই একটি অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আশা প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করার যোগ্যতা রয়েছে ভারতের। তাঁর কথায়, “ভারত এখন যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাতে সম্ভবত তারা মধ্যস্থতা করতে পারে। কিন্তু অন্যের ভূখণ্ড যে জোর করে দখল করা যাবে না, এই ব্যাপারে পুতিনের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে ভারতকে।”