রজনীকান্তের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। —ফাইল চিত্র
চার বছর আগে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে রজনীকান্তের। তার উপর রয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। তাই ৬৯ বছরের দক্ষিণী সুপারস্টারকে রাজনীতিতে নামতে নিষেধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অথচ আগামী বছর তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল ঘোষণার কথা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি ‘ভুয়ো’ চিঠি ঘিরে তোলপাড় রাজনৈতিক মহলে। ওই চিঠিকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিঠিতে যা বলা হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন থালাইভা রজনীকান্ত। ‘নির্দিষ্ট সময়ে’ দল ঘোষণা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে নামা হবে কি না, বা হলেও তিনি নিজে প্রচারে নামবেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা, সংশয়।
দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন রজনীকান্ত। তার জন্য ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় ২০১৬ সালে আমেরিকায় গিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হয় তাঁর। আগামী বছরের মাঝামাঝি বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই দল ঘোষণা করে প্রচারে ঝাঁপানোর কথা রজনীকান্তের। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে এই সময় রাজনীতিতে নামা বা প্রচার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এই অবস্থায় জনসমাবেশে যোগ দিলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। রজনীকান্তের যে হেতু কিডনির সমস্যা অর্থাৎ কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। তাঁদের আরও বক্তব্য, কোভিড টিকা এলেও ৬৯ বছর বয়স এবং কিডনির সমস্যার কারণে রজনীকান্তের শরীরে তা দেওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এমন পরিস্থতিতেই রজনীকান্তের বার্তা দিয়ে বুধবার ছড়িয়ে পড়ে একটি চিঠি তাতে তাঁর রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠার ইঙ্গিত ছিল। রাজনৈতিক শিবিরে এবং তাঁর ভক্তদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল জল্পনা। কিন্তু সে সব উড়িয়ে দিয়ে রজনীকান্ত বলেন, ‘‘ওই চিঠি আমার নয়। তবে আমার শারীরিক অসুস্থতা এবং তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ সংক্রান্ত যা লেখা হয়েছে চিঠিতে, তা সত্যি।’’ ওই চিঠির বয়ান অনুযায়ী জানুয়ারিতে নতুন দল ঘোষণা এবং সেই বিষয়ে ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রজনীকান্ত অবশ্য নির্দিষ্ট কোনও সময়ের কথা উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, ‘‘সঠিক সময়েই আমার রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানাব।’’
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ভাঙল ‘পিসি-ভাইপো’ জোট, বিজেপিকে ভোটের ঘোষণা মায়ার
বুধবার ফাঁস হওয়া ওই চিঠিতে রজনীকান্তের বয়ানে লেখা হয়েছে, ‘আমার জীবন নিয়ে ভয় পাই না। জনকল্যাণের জন্য চিন্তিত। আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই মতো রাজনীতিতে নামব। কিন্তু এর মধ্যে আমার শরীরের অবস্থা ভাল নয়। সেই প্রক্রিয়ায় তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি রাজনীতিতে আসি, তা হলে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দলের নাম ঘোষণা করব। ডিসেম্বরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। আমার কী করা উচিত, সেই সিদ্ধান্ত ছাড়লাম ভক্ত এবং সাধারণ মানুষের উপর। তখনকার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’
অন্য দিকে রজনীকান্তের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে ভক্ত-অনুগামীদের সামনে হাজির হয়ে সক্রিয় রাজনীতির কর্মকাণ্ড ঘোষণা করতে পারেন সুপারস্টার রজনীকান্ত। ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেই ঘোষণা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরাসরি জনতার সামনে না এসেও জায়ান্ট স্ক্রিনে ভাষণ দিতে পারেন তিনি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও একাংশেরও অনুমান তেমনটাই।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু! আশঙ্কা ওড়ালেন না রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সুপারস্টার রজনীকান্তের রাজনৈতিক দল গঠন ঘিরে জল্পনা দীর্ঘদিনের। রুপোলি পর্দা থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রাখার ঘোষণা করেছিলেন ২০১৭ সালে। ওই সময় দলে নাম লেখানোর জন্য Rajinimandram.org নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করেন তিনি। এর পর গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের গুঞ্জন শুরু হয়, এ বার নিশ্চয়ই দল ঘোষণা করে প্রার্থী দেবেন সুপারস্টার। আর এক সুপারস্টার কমল হসন দল ঘোষণা করে লোকসভাতেও লড়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাঠে নামা হয়নি রজনীকান্তের। তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোটের আগে রাজনীতির মঞ্চে তাঁর অভিষেক ঘটে কি না, সে দিকে নজর থাকবে পর্যবেক্ষক এবং আম জনতার।