ফাইল চিত্র।
তাঁর শাড়ি পরার ধাঁচ, হাসির উজ্জ্বলতা, চুলের ছাঁট, হাত নাড়ানোর মুদ্রা— এ সবই বড় পরিচিত ভারতবাসীর। ঠাকুরমা ইন্দিরা গাঁধীকে প্রতি পদক্ষেপে মনে করিয়ে দেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা।
সেই নাতনি আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনীতিতে পা দেওয়ার পর লখনউয়ের দলীয় কার্যালয়ে তাঁর ঠাকুরমার স্মৃতিসম্বলিত ঘরটিতেও যেন প্রাণ ফিরে এল। ঘষামাজা চলছে নতুন করে। ওই ঘরে ওঠার একটা পৃথক সিঁড়ি আছে, যেটা শুধু ইন্দিরাই ব্যবহার করতেন। সাফাই হচ্ছে সেই সিঁড়িও। উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর, শীঘ্রই ওই সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঠাকুরমার ঘরটিতে এসে বসবেন প্রিয়ঙ্কা। ঠাকুরমার সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্যের কথা অস্বীকার করেন না তিনি নিজেও। বলেওছিলেন এক সাক্ষাৎকারে, ‘‘আমায় দেখতে আমার ঠাকুরমার মতো। আমি হয়তো অনেকটা আমার ঠাকুরমার মতোও। ছোটবেলায় এমন একটা বাড়িতে বড় হয়েছি যেখানে তিনিই ছিলেন কর্ত্রী। তার একটা প্রভাব তো আমার উপর পড়েছিল।’’ তবে স্বভাবের দিক থেকে, তাঁর দাবি, তিনি বাবা রাজীবের বেশি কাছাকাছি— অনেক ‘নরম’।
রাজনৈতিক শিবির বলাবলি করছে— শুধু ইন্দিরার মতো দেখতে বলে নন, শুধু রাজীবের মেয়ে বলে নন, অপেক্ষাকৃত নবীন প্রজন্মের কাছেও রাজীব-কন্যার ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিশমা প্রায় লোককথার মতো। অমেঠী-রায়বরেলীর মাঠঘাট-চৌরাহায় শাড়িপরিহিতা প্রিয়ঙ্কাকে কদাচিৎ দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময়েই তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেটা জনচিত্তে তাঁর আকর্ষণকে আরও বাড়িয়েছে। রাজীব-হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত নলিনী মুরুগনের সঙ্গে তাঁর সেলে গিয়ে দেখা করা এবং ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনা গণমনে প্রিয়ঙ্কার চরিত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
আরও পড়ুন: মোদীকে কুপোকাত করতে রাহুলের ব্রহ্মাস্ত্র, মোদী-যোগীর গড়ে অভিষেক প্রিয়ঙ্কার
‘‘আমি কিন্তু আমার মা এবং ভাইয়ের থেকে অনেক বেশি নিভৃতে থাকতে পছন্দ করি। তবে লাজুকও নই। কেউ জানতে চাইলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট বলে দিই।’’ দীর্ঘদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। ২০০৪ সালে অমেঠীতে প্রথম বার লোকসভা ভোটে দাঁড়ালেন রাহুল। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তাঁর জিপ-সফরে আগাগোড়া সঙ্গী প্রিয়ঙ্কা এবং তাঁর স্বামী রবার্ট বঢরা। খেতের কাজ ফেলে ছুটে আসা গরীবগুরবো মানুষজন কপাল চাপড়ে বলতেন, ‘এ যেন যুবতী ইন্দিরা ফের হাজির’! বর্তমান প্রতিবেদক-সহ উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে সে বার সাবলীল ভাবেই কথা বলেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তখন রাহুলই ছিলেন মিডিয়ার চোখে স্বল্পবাক এবং অর্ন্তমুখী। দাদাকে সামনে এগিয়ে দিতে উন্মুখ বোন সেদিন বলেছিলেন, ‘‘রাহুল আমার থেকেও অনেক বেশি এবং ভাল কথা বলে।’’ সে বার সনিয়া গাঁধীর প্রচারের বেশির ভাগ বক্তৃতাও লিখে দিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। কয়েক বছর পরে তিনিই আবার জানিয়েছিলেন, ‘‘এখন আর লিখে দেওয়ার দরকার পড়ে না। আমার মা জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার ব্যাপারে আগে খুব লাজুক ছিলেন। কিন্তু পরিবেশ-চ্যালেঞ্জ-পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক বদলে গিয়েছেন। একই ভাবে বদলেছে রাহুলও।’’
জমি দুর্নীতি নিয়ে রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে বিজেপি আক্রমণ শানিয়েছে লাগাতার। কংগ্রেস সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে রবার্টের সম্পর্কে টেনশন নিয়েও নানা গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁদের পারিবারিক চিত্রটি কখনও টোল খায়নি। আজ ফেসবুকে দুজনের ছবি দিয়ে রবার্ট লিখেছেন, ‘অভিনন্দন পি...জীবনের সব পর্বেই তোমার পাশে আছি। নতুন দায়িত্বের জন্য অনেক শুভকামনা।’