তবু নির্মলা বলছেন, হাল খারাপ নয়!

বাস্তবিকই, জুনের ১.২ শতাংশের থেকে জুলাই মাসে কারখানার উৎপাদন ৪.৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। কিন্তু নির্মলা এটা বললেন না যে, ২০১৮-র জুলাইতে উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৯
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই

‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে র‌্যাঞ্চোর মন্ত্র ছিল, বিপাকে পড়লে বুকে হাত রেখে বলতে হবে, ‘অল ইজ় ওয়েল, অল ইজ় ওয়েল।’ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও আজ অনেকটা সেই রাস্তা নিলেন। একের পর এক গাড়ি কারখানা উৎপাদন বন্ধ রাখছে। লাখো মানুষের কাজ যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিস্কুট থেকে সাবান-শ্যাম্পু, তাদেরও বিক্রি কমছে। এই অবস্থায় নির্মলা সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করলেন, ‘‘উৎপাদন চাঙ্গা হওয়ার স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যাচ্ছে।’’

Advertisement

কী ভাবে? অর্থমন্ত্রীর দাবি, উৎপাদন এপ্রিল থেকে জুনে যে হারে বেড়েছিল, তার তুলনায় জুলাই মাসে আরও বেশি হারে বেড়েছে। বাস্তবিকই, জুনের ১.২ শতাংশের থেকে জুলাই মাসে কারখানার উৎপাদন ৪.৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। কিন্তু নির্মলা এটা বললেন না যে, ২০১৮-র জুলাইতে উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ।

নির্মলা আজ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার তৃতীয় দফার পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অর্থনীতির হালকে তিনি কী ভাবে দেখছেন— শুধুই ঝিমুনি না মন্দা— তা নিয়ে মন্তব্যে যেতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি নাম দিতে আসিনি। কাজ করতে এসেছি।’’ মূল্যবৃদ্ধির হার, বিদেশি লগ্নির পরিমাণ, বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারের মতো নানা মাপকাঠি তুলে ধরে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, অর্থনীতির হাল খুব খারাপ নয়। কিন্তু এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে এসেছে কেন তবে? তিনি কি প্রসঙ্গটা আড়াল করতে চাইছেন? প্রশ্ন শুনে রাগত স্বরে নির্মলা বলেন, ‘‘এ তো সরকারি পরিসংখ্যান। সকলের সামনেই রয়েছে। কারও সন্তুষ্টি হলে তুলে ধরতেই পারি।’’

Advertisement

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ক’দিন আগেই বলেছিলেন, অর্থনীতির রোগ সারাতে গেলে আগে রোগের কথা স্বীকার করতে হবে। নির্মলা কি সেটা করছেন? তাঁর দাবি, বিদেশি লগ্নি যথেষ্ট পরিমাণে আসছে। কিন্তু তিনি এটা বলছেন না, শুধু জুলাই মাসেই এ দেশের শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলি ১২ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। নির্মলা বলেছেন, বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার বাড়ছে। কিন্তু নির্মলার পরিসংখ্যানই বলছে, রফতানির হাল খারাপ বলে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে ঘাটতিও বাড়ছে। নির্মলা দাবি করেছেন, গত অর্থ বছরে লগ্নির হার তার আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু নির্মলা যা বলেননি, মোদী সরকারের প্রথম বছরের তুলনাতেই সেই লগ্নির হার কম।

অর্থ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, এপ্রিল-জুনে জিডিপি মাত্র ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রী ১১ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে বাজেটের হিসেব কষেছেন। এ দিকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গিয়ে সরকারের খরচ বাড়ছে। জিডিপি-র বহর না বাড়লে, জিডিপি-র তুলনায় রাজকোষ ঘাটতি ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখাও কঠিন হবে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার কটাক্ষ, ‘‘শুধু এটুকুই বলব, সঙ্কট কী ভাবে সামাল দেবেন, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী দিশেহারা।’’

‘অল ইজ় ওয়েল’ মন্ত্র মেনে নির্মলার জবাব, ‘‘আমি বাজেটের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সব রকম চেষ্টা করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement