রক্তাক্ত: শেল ফেটে গুরুতর জখম এক জনকে বাঁচাতে তৎপর স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার কুলগামে। ছবি: এএফপি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাশ্মীর সফরের এক দিন আগে ফের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য পেল বাহিনী। তিনটি ঘটনায় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে পাঁচ জঙ্গি। নিহত হয়েছেন ৪ জওয়ানও। দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা শেল ফেটে মৃত্যু হয়েছে ছ’জন স্থানীয় বাসিন্দার। বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪৩ জন।
কুলগামের লারু এলাকায় জঙ্গি গতিবিধির খবর পেয়ে আজ সকালে অভিযানে নামে বাহিনী। তল্লাশির সময়ে জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় জঙ্গিরা। সংঘর্ষে নিহত হয় তিন জঙ্গি। আহত হন দুই সেনা। সংঘর্ষের সময়ে বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন স্থানীয়দের একাংশ। বাহিনী-জনতা সংঘর্ষে ৪৩ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রথমে কুলগাম ও অনন্তনাগের জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গুরুতর আহতদের শ্রীনগরের হাসপাতালে আনা হয়েছে।
ঘটনার পরে নিষেধ না শুনে ঘটনাস্থলে যান কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। সেখানে পড়ে থাকা একটি শেল ফেটে উবেইদ লাওয়ে, উজেইর আহমেদ, মনসুর আহমেদ, তালিব মকবুল, তাজামুল আহমেদ ও ইরশাদ আহমেদ নিহত হন।
এর পরে দুপুরে পৌনে দু’টো নাগাদ রাজৌরির সুন্দরবনি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে এক দল পাকিস্তানি জঙ্গির সন্ধান পায় সেনার একটি টহলদারি দল। সংঘর্ষে দুই জঙ্গি নিহত হয়। মৃত্যু হয় কৌশল কুমার, রঞ্জিৎ সিংহ ও রজতকুমার বাসন নামে তিন সেনার। বাকি জঙ্গিদের খোঁজে অভিযান চলছে।
রাতে পুলওয়ামার মিদুরা এলাকায় সিআরপিএফ শিবিরের মধ্যে জঙ্গিদের স্নাইপার রাইফেল থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন এক এসএসবি জওয়ান। এই প্রথম কাশ্মীরে স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করল জঙ্গিরা।
কুলগামে স্থানীয় বাসিন্দাদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপালের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কে বিজয় কুমার ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিংহ। তাঁরা জানিয়েছেন, নিষেধ না মেনে স্থানীয় বাসিন্দারা সংঘর্ষের এলাকায় যাওয়ায় প্রাণহানি হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁদের এমন এলাকা এড়িয়ে চলাই উচিত।
কুলগামে সংঘর্ষের জেরে কাল রাজ্যে হরতালের ডাক দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের বক্তব্য, ‘‘কুলগামের সব রাস্তা বন্ধ। সংবাদমাধ্যমকেও দূরে রাখা হয়েছে। সেখানে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে বাহিনী। মহিলাদের মারধর করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে বাড়িও।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সংগঠনও এই বন্ধকে সমর্থন করেছে। তাদের দাবি, ‘‘সংঘর্ষের এলাকা পুরোপুরি বিস্ফোরক-মুক্ত করা বাহিনীর দায়িত্ব। কুলগামে শেল ফেটে ছ’জনের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’’
মঙ্গলবার কাশ্মীরে যাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। সেখানে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ও উপত্যকার রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রাজনাথের। গত কালই জম্মু-কাশ্মীরে পুরভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। কিছুটা ফাঁকা মাঠেই ভাল ফল করেছে বিজেপি। কিন্তু রাজনাথের সফরের আগে হিংসায় বাড়ল উদ্বেগ।