ফাইল চিত্র।
লখিমপুর খেরিতে চার কৃষক ও এক জন সাংবাদিককে পিষে মারার ঘটনার সঙ্গে জড়িত একটি গাড়িতে উপস্থিত ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস মিশ্র। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট আজ লখিমপুরের আদালতে যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে এ কথা বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টেনি গত তিন মাসে বার বার দাবি করেছেন, বিক্ষোভরত কৃষকদের পিষে মারার ঘটনার সময়ে গাড়ির ভিতরে তাঁর পুত্র আশিস উপস্থিত ছিল না। মন্ত্রী-পুত্র নিজেও এই দাবি করে এসেছে। তবে আজ স্থানীয় আদালতে পেশ করা ৫ হাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট অন্য কথাই বলছে। সরকারি উকিল এস পি যাদব সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সে দিন ঘটনাস্থলে আশিসের উপস্থিতির কথা সাক্ষীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে। একে কেস ডায়েরির অংশ হিসেবে রাখা হয়েছে।’’ আজ সকালে বিরাট ট্রাঙ্কের ভিতরে পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট লখিমপুরের আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালত এটি গ্রহণ করলে মামলা এগোবে।
তিন মাস আগে লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যার ঘটনা দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলেছিল। ঘটনার পরের দিন পুলিশের এফআইআরে আশিস ও অন্য ১২ জনের নাম রাখা হয়। তবে সপ্তাহখানেক ধরে আশিসকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। দেশে ব্যাপক প্রতিবাদের মধ্যে ও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর অবশেষে গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রী-পুত্রকে। গত মাসেই সিট স্থানীয় আদালতে জানায়, লখিমপুরে কৃষকদের পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে কৃষক হত্যার পর করা এফআইআরে কেন মন্ত্রী টেনির নাম রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মৃত কৃষকদের আইনজীবী মহম্মদ আমন আজ বলেন, ‘‘মন্ত্রী অজয় মিশ্রের নামে আমরা অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু এফআইআরে তাঁর নাম রাখা হয়নি। এ নিয়ে সিটের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। তবে আমাদের কথা মেনে নেওয়া হয়নি।’’ আমনের কথায়, ‘‘লখিমপুরে কৃষক হত্যার তদন্ত যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমরা খুশি নই। মন্ত্রীর নামে গাড়ি, অথচ মামলায় তাঁর নাম নেই। উপযুক্ত তদন্তের জন্য হস্তক্ষেপ চাইতে আদালতে যেতে পারি আমরা।’’
টেনিকে কী কারণে বরখাস্ত করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে টুইটারে প্রিয়ঙ্কা আজ বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী রক্ষকের পদে থেকেও ভক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। লখিমপুরের ঘটনায় যে চার্জশিট পেশ হয়েছে, তাতে মূল অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলে। অথচ মোদীজির আশীর্বাদে অজয় মিশ্র আজও মন্ত্রিসভায় রয়ে গিয়েছেন, তদন্তকারীরা তাঁর কাছে পৌঁছননি।’’ টুইট করে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘৫ হাজার পাতার চার্জশিটে যা রয়েছে, সেই সত্যি দেশের মানুষ ভিডিয়োয় দেখে নিয়েছেন। তবে তা সত্ত্বেও মোদী সরকার অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছে।’’
লখিমপুরে কৃষি আইন বিরোধী বিক্ষোভের সময়ে চার কৃষক ও এক জন সাংবাদিককে গাড়িতে পিষে মারার ঘটনা এবং তার পরে হিংসার জেরে বিজেপির দুই কর্মী-সহ তিন জনকে হত্যার মামলায় দু’টি এফআইআর হয়েছে। মৃত কৃষকদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে করা এফআইআরে আশিস মিশ্রকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে রাখা হয়েছে। লখিমপুরের বিজেপি কর্মী সুমিত জায়সওয়ালের অভিযোগের ভিত্তিতে অন্য একটি এফআইআর করা হয়েছে। সেখানে নামহীন কৃষকদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে অবশ্য একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, কৃষকদের পিষে মারার সময়ে গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন সুমিত। আশিসের সহ-অভিযুক্ত হিসেবে সুমিতকেও গ্রেফতার করা হয়।