কার্যত ফাঁকা রাবাংলার বুদ্ধপার্ক। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর পর্যটন মরসুমে এ বার এখনও অবধি সিকিমে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। অক্টোবরের গোড়ায় দক্ষিণ লোনাক হ্রদে জলস্ফীতি, হড়পা বানে উত্তর সিকিম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেকে মারা যান। নিখোঁজও অনেকে। বন্ধ হয়ে যায় রাস্তাঘাট। সিকিম পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, ঘটনার জেরে পুজোর বুকিং, হোটেল ও রিসর্টের বুকিং ৮৫ শতাংশ থেকে নেমে ২৫ শতাংশ হয়ে যায়। যা পরে, পৌঁছয় তলানিতে। পূর্ব ও দক্ষিণ সিকিম খোলা থাকলেও এখনও পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি। দীপাবলির বুকিংয়ের ক্ষেত্রেও সিকিম নিয়ে পর্যটকেরা ভাবনাচিন্তা করছেন।
সিকিম সরকারের পর্যটন কর্তারা জানাচ্ছেন, ২০ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের বুকিং বাতিল ধরে ক্ষতির মোটামুটি হিসাব করা হয়েছে। সে হিসাবে ১৫০ কোটি টাকা হোটেল, পরিবহণ, খাবার, গাইড, ঘোরা বাবদ ধরা হয়েছে। দীপাবলির অবস্থা ধরলে টাকার অঙ্ক ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সিকিমের প্রভাব পড়েছে দার্জিলিং ও কালিম্পঙের পর্যটনেও। রাস্তাঘাট, সেতু প্রভৃতি পরিকাঠামো ঠিক হলে নতুন বছরে পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সিকিমের পর্যটন দফতরের এক সচিব বলেন, ‘‘পর্যটন সিকিমের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তিস্তার ভয়ঙ্কর রূপ পর্যটন পরিকাঠামো নষ্ট করে দিয়েছে। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয়েছে।’’ তিনি জানান, গত অগস্ট থেকে সরকারি-বেসরকারি স্তরে যা বুকিংয়ের কথা শোনা যাচ্ছিল, তাতে সিকিমের পুজোর মরসুম তিন বছর পরে সেরা হতে যাচ্ছিল। যদিও এখন তা কার্যত প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির দিকে যাচ্ছে।
মহালয়ার পর থেকেই পাহাড়ে পুজোর পর্যটন মরসুম শুরু হয়ে যায়। নবরাত্রি, দুর্গাপুজো, দীপাবলি অবধি সেই মরসুম চলে। পরে, পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকলেও, শুরু হয়ে যায় বড়দিন আর নতুন বছরের মরসুম। সব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ অবধি মোটামুটি ভিড় থাকে। তার পরে স্কুল-কলেজের পরীক্ষা শেষ হলে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে গরমের মরসুম শুরু হয়। ২০২০-২১ সালে সিকিমের পর্যটন করোনার জেরে মোটামুটি বন্ধ ছিল। গত বছর সিকিমে পর্যটন ব্যবসা ভালই হয়েছিল। এ বার তা অনেকেই বাড়ার আশা ছিল।
‘ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন অব সিকিম’-এর সহ-সভাপতি চেইন ইয়াং বলেন, ‘‘‘এক দিনের বিপর্যয় গোটা মরসুমের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। দীপাবলির মরসুমও খুব ভাল হবে বলে মনে হচ্ছে না। লোকজন খোঁজ নিচ্ছেন বটে, তবে বুকিং কম। উত্তর সিকিম তো পর্যটন মানচিত্রের বাইরেই রয়েছে।’’ একই ভাবে ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘সিকিম শুধু নয়, এই গোটা অঞ্চলের পর্যটনেই দুর্যোগের প্রভাব বিরাট ভাবে পড়েছে।’’
গত সপ্তাহেই দার্জিলিং থেকে হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ড কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি গঙ্গাপুরমকে চিঠি দিয়ে সিকিম, দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ে পর্যটনে নতুন করে প্রচার-প্রসারের অনুরোধ জানিয়েছেন।