মুলায়ম সিংহ ও অখিলেশ যাদব
যুযুধান ছেলের সঙ্গে সন্ধি করতে দিল্লি থেকে লখনউ গেলেন মুলায়ম সিংহ। ছেলের সঙ্গে কথাও বললেন আলাদা করে। তার পরেই মন্ত্রিসভা ও দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মুলায়মের ভাই শিবপাল যাদব। তবে মন্ত্রিসভা থেকে কাকার পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভাইপো। আর এ ভাবেই আপাতত যুদ্ধবিরতি যাদব কূলে।
নির্বাচনের মুখে উত্তরপ্রদেশে যাদব পরিবারের কলহ যে মিটে যাবে, তা নিয়ে কোনও পক্ষেরই সংশয় ছিল না। ধোঁয়াশা ছিল একটাই, কী হবে সেই মীমাংসা সূত্র। শিবপাল ইস্তফা দেওয়ার পরে অখিলেশ কি ফিরে পাবেন দলের রাশ? শিবপাল কি মন্ত্রিসভায় ফিরবেন? আর এই ঘটনায় যাঁকে ‘মন্থরা’-এর ভূমিকায় দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, সেই অমর সিংহের ভূমিকাই বা কী হবে? এখনও পর্যন্ত মৌন নেতাজি। শনিবারের মধ্যে দলের বৈঠক ডেকে সব ঝকমারি মিটিয়ে ফেলতে চান তিনি।
মুলায়ম দলের ভার কাকা শিবপালের হাতে দেওয়ার পরই মন্ত্রিসভায় তাঁর সব দফতর কেড়ে নেন অখিলেশ। দফতরহীন মন্ত্রী বনে যান মুলায়মের ডান হাত হিসেবে পরিচিত শিবপাল। এ দিন ভাইপোর সঙ্গে প্রায় মিনিট পনেরো কথা হয় শিবপালের। মুলায়মও কথা বলেন ছেলের সঙ্গে। তার পরই দল ও মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন কাকা। এর আগেই অখিলেশ জানান, ৩ অক্টোবর থেকে ‘সমাজবাদী উন্নয়ন রথযাত্রা’য় বেরোচ্ছেন তিনি। ২০১২ সালেও এ ভাবে গোটা রাজ্য চষে অখিলেশ ক্ষমতায় এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানেন, মুলায়ম যে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডাকতে চলেছেন, সেখানে ৯ জনের মধ্যে ৬ জনই তাঁর অনুগত। কাজেই কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না তাঁকে। কিন্তু সব কিছু মিটে গেলেও যে দগদগে ক্ষতটা থেকে যাবে, তার পরে অখিলেশকে ফের কুর্সিতে বসানোর জন্য বাকি পরিবারের সদিচ্ছা কতটা থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
অখিলেশের অনুগত আর এক কাকা রামগোপাল যাদব আজ বলেন, ‘‘এ ভাবে অখিলেশকে দলের সভাপতি পদ থেকে সরানোটা ঠিক হয়নি। এর চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে বললে এই বিভ্রান্তি তৈরি হতো না।’’ অমর সিংহের বিরুদ্ধে তোপ দেগে রামগোপাল বলেন, ‘‘নেতাজির সরল মনের সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে।’’ তবে অমরের পাশে দাঁড়িয়ে শিবপাল বলেছেন, ‘‘নেতাজিই তাঁকে দলে এনেছেন। যত বেশি মানুষকে জোড়া যায়, ততই দল শক্তিশালী হয়। আমাকে দলের সভাপতিও করেছেন নেতাজিই। তিনি যা বলবেন, তাই করব।’’
যাদব পরিবারের এই ‘মহাভারত’-এ নেতাজি কী ভাবে ‘মন্থরা’কে সামাল দেন, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা আর কয়েকটি দিনের। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের উত্তপ্ত ভোট বাজারে যাদব কূলের এই হাল দেখে বিরোধী নেত্রী মায়াবতীর কটাক্ষ, ‘‘যে ভাবে অখিলেশ বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন, তার পর মুলায়মের ইস্তফাই দেওয়া উচিত। তবে মানুষ বোঝেন, যদুবংশে এই কলহ স্রেফ নাটক ছাড়া কিছু নয়।’’