নরেন্দ্র মোদীকে সন্তেরা ‘আদেশ’ দিয়েছেন, আইন করে রামমন্দির বানান। মোহন ভাগবতও বলেছেন, সন্তদের পাশে আছে আরএসএস। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ফৈজাবাদের নাম বদলে ‘শ্রী অযোধ্যা’ রাখারও দাবি তুলেছে। আজ বিজেপির শরিক দল শিবসেনাও আইন করে মন্দির নির্মাণের কথা বলল। সামনের মাসে উদ্ধব ঠাকরে নিজেও যাচ্ছেন অযোধ্যা। আজ নরেন্দ্র মোদীর উপর চাপ বাড়িয়ে তাঁর দলের নেতা সঞ্জয় রাউত বললেন, ‘‘এখনই আইন না হলে আর কখন হবে জানি না। ২০১৯ সালের পরে কী হবে জানি না, কিন্তু এখন তো সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। আদালত রামমন্দিরের বিষয় সমাধান করতে পারবে না, এটি আস্থার বিষয়। এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রশ্ন আর নরেন্দ্র মোদীই তা করতে পারেন।’’
কিন্তু চার দিক থেকে আইন করার জন্য যে দাবি উঠছে, সেটি কি আদৌ ‘চাপ’ নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরে? না কি ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্ব ঠিক এ ভাবেই রামের হাওয়ায় সওয়ার হতে চাইছেন?
ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনায় বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন, সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা সরাসরি অধ্যাদেশ এনে মন্দির নির্মাণের দাবি তুলছেন। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। অধ্যাদেশ আনার কোনও ভাবনা নেই। আইনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও এক মন্দির নির্মাণের জন্য এই ধরনের আইন আদৌ আনা যায় কি না, সেটিও বিবেচ্য বিষয়। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে লোকসভায় আইন পাশ করানো গেলেও রাজ্যসভায় তা আটকে যেতে পারে। আবার বিজেপিরই একটি বড় অংশ মনে করে, আগের মতো আর রামমন্দির নিয়ে উন্মাদনা তৈরি করা কঠিন।
বিজেপি সূত্রেরই দাবি, এ সবের মধ্যেই দল আসলে রামমন্দির নিয়ে বিতর্ক জিইয়ে রেখে জল মাপতে চাইছে। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী ইতিমধ্যেই মন্দিরে মন্দিরে ঘোরা শুরু করেছেন। তিনিও হিন্দুত্বের তাস খেলছেন। রামমন্দির নিয়ে আইন আনা হলে তিনি কি সমর্থন করবেন? না করলে স্পষ্ট হবে কে আসল হিন্দু, কে নকল। শশী তারুরও বলেছেন, কোনও ভাল হিন্দু না কি অযোধ্যায় রামমন্দির চাইবেন না। সেটিই কি রাহুল গাঁধীর অবস্থান?’’ কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, ‘‘ভোট এলেই রামের কথা মনে পড়ে বিজেপির। ভোট ফুরোলে ভুলে যায়। তাদের মুখে রামনাম, মনে নাথুরাম।’’
বিরোধীরা আখছার বিজেপির সমালোচনা করে স্লোগান দেয়, ‘‘রামমন্দির বানায়েঙ্গে, তারিখ নেহি বাতায়েঙ্গে।’’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজনে যে সন্তেরা মোদীকে আইন করার ‘আদেশ’ দিয়েছেন, তাঁরাও এই নিয়ে আন্দোলনের সময়সীমা ক্রমশ পিছোচ্ছেন। তাঁদের নতুন সময়সীমা ফেব্রুয়ারির গোড়া। তাঁদের পরের ধর্মসংসদ হবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আদালত থেকে তার মধ্যে কোনও সুরাহা না হলে সন্তদের দাবি মেনে লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে কি আইন করার কোনও সময় থাকবে সরকারের?