শিরোমণি অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদল।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা করতে অত্যন্ত আগ্রহী বিজেপির প্রাক্তন শরিক শিরোমণি অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদল। সংসদের বাজেট অধিবেশনের সময়ে তিনি একাধিক বার তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। বিষয়টি বিবেচনা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে কবে এই বৈঠক হবে তা এখনও স্থির করে উঠতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
দলীয় সূত্রের মতে, বিজেপির প্রাক্তন জোটসঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে আগ্রহী তৃণমূল কংগ্রেস। তাতে বিজেপির উপরে চাপ তৈরি করা যাবে। অন্য দিকে এই দলগুলির (শিবসেনা, অকালি) কংগ্রেসের প্রতি বাড়তি রাজনৈতিক আনুগত্যের মনোভাবও নেই। কিন্তু অকালির সঙ্গে চটজলদি আলোচনায় বসার একটা সমস্যা আপাতত তৃণমূলের থেকেই যাচ্ছে। তা হল, পঞ্জাবের রাজনীতিতে অকালি ও অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ প্রবল ভাবে যুযুধান। কেজরীওয়ালের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক ভাল। তৃণমূল নেত্রী দিল্লিতে এলে তাঁর বাসভবনে এক বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মামলা করার যে উদ্যোগটি দেখা গিয়েছে তা মূলত কেজরীওয়ালই শুরু করেছিলেন মণীশ সিসৌদিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরে।
এই পরিস্থিতিতে সব দিকে ভারসাম্য বজায় রেখে তবেই হরসিমরতের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষি বিলের বিরোধিতা করে বিজেপি সঙ্গ ত্যাগ করেছিল আপ। তখন থেকেই সুদীপের সঙ্গে বিরোধী রাজনীতির প্রশ্নে সুসম্পর্ক পঞ্জাবের এই নেত্রীর। সুদীপবাবুর কথায়, “উনিশের লোকসভা ভোটে এনডিএ ছিল ষোলটি দলের। কিন্তু এই জোট থেকে ছোট বড় মিলিয়ে ১৪টি দল বেরিয়ে গিয়েছে। এনডিএ যেখানে ছিল, আজ সেখানে নেই। তাদের ভিতরে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আর সে কারণেই বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী সরকার ভাঙানো বা কিনে নেওয়ার জন্য বিজেপির এত তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসা জেডিইউ, শিবসেনা, অকালি — এদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করা প্রয়োজন।” আজই কলকাতায় জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্যভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলিকে (যে যেখানে শক্তিশালী) সর্বাধিক গুরুত্ব এবং খোলা হাত দিতে হবে। সেখানে এসে আসন ভাগাভাগির চেষ্টা করলে (কংগ্রেস) আখেরে বিরোধী রাজনীতির ক্ষতি। ভোটের ফলের পরে সমস্ত বিরোধী দলগুলির প্রাপ্ত আসন এবং গুরুত্ব বুঝে নেতৃত্বের ভার স্থির করা যেতে পারে, কিন্তু তা আগে করলে জোটই ঘেঁটে যাবে। তবে এখন থেকেই যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে তা জানিয়েছেন সুদীপ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে আদালতে যাওয়ার প্রশ্নে অকংগ্রেসি, অবিজেপি সাত-আটটি দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে তৃণমূল। পরে কংগ্রেসও এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে। সুদীপ জানান, তাঁর সঙ্গে সম্প্রতি ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদ পি ভি মিধুন রেড্ডির কথা হয়েছে। মিধুন জানিয়েছেন, তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ তেলুগু দেশম পার্টি। জাতীয় রাজনীতির প্রশ্নে তাঁরা বিজেপির দিকে ঝুঁকবেন না, কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই তিনি জানিয়েছেন।