বদরপুরে শরিফুদ্দিনের বাড়িতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর ভিড়। ছবি: শীর্ষেন্দু শী।
ঘরের ছেলেকে পিটিয়ে, থেঁতলে খুনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে প্রস্তুত শরিফুদ্দিনের পরিবার।
করিমগঞ্জের বদরপুরের বছলা গ্রামের বাড়িতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসার পর বার বার এটাই বলছেন শরিফুদ্দিনের দিদি জুবরা বেগম। ভাইয়ের দেহ শেষ বারের মতো দেখতে চাইছেন। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন শরিফের বৃদ্ধা মা-ও। হুঁশ ফিরলেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। শুধু বলছেন, “ছেলের মুখটা এক বার দেখতে দাও। কত দিন দেখি না।” বাসিন্দারা জানান, শরিফুদ্দিনরা ৭ ভাই, এক বোন। ছোট ভাই নাসিরকে নিয়ে ডিমাপুরে পুরনো গাড়ির ব্যবসা শরিফের। আট বছর আগে সেখানে এক নাগা মহিলাকে বিয়ে করেন।
ধর্ষণের অভিযোগে দাদাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর নাসির পালিয়ে আসেন করিমগঞ্জে। গত কাল গণপ্রহারে শরিফুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার ছবি টেলিভিশনে দেখে শিউরে উঠছেন তিনি। তাঁর দাবি, অভিযোগকারিণী তরুণী শরিফুদ্দিনের স্ত্রী হোলি খানের আত্মীয়। ডিমাপুরের আড়াই মাইল এলাকায় পাশের বাড়িতেই থাকতেন। প্রায়ই তাঁদের বাড়িতে আসতেন। ২৩ ফেব্রুয়ারিও গিয়েছিলেন। তিনিই শরিফকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ওঠেন ডিমাপুরের একটি হোটেলে। নাসিরের অভিযোগ, শরিফের কাছে ওই তরুণী দু’লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। তা না পেয়ে হোলিকে ফোন করে হুমকি দেন টাকা না দিলে ধর্ষণের মামলা করা হবে। পরে থানায় তা দায়েরও করেন। এর পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। নাসির বলেন, “দাদাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বিচারে দাদা নির্দোষ প্রমাণিত হবে। সব কিছু নষ্ট হয়ে গেল।” তিনি জানান, বিচার চাইতে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যেতে প্রস্তুত।
বদরপুরের কংগ্রেস বিধায়ক জামালউদ্দিন বলেন, “অহেতুক অভিযোগে এক জনকে নৃশংস ভাবে খুন করা হল।” প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমদ বলেন, “নাগাল্যান্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা দরকার।” শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পালও নাগাল্যান্ডের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “এটা তালিবানি বর্বরতা।” ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বরাক উপত্যকায় বন্ধের ডাক দিয়েছে মুসলিম ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন। এ দিন বদরপুর, ভাঙ্গা, লামাজুয়ার, আছিমগঞ্জ ও নিলামবাজারে জনতা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। তার জেরে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। বিকেলের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।