দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা স্তরের নির্বাচনে আচমকা ধাক্কা খেতে শুরু করেছে বিজেপি। অমিত শাহের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ছবি: পিটিআই।
পর পর হারের খবর দেশের নানা প্রান্ত থেকে। লোকসভার উপনির্বাচন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত তিনটি উল্লেখযোগ্য নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। আজ, রবিবার পঞ্জাবের গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফল ঘোষিত হয়েছে কেরলের ভেঙ্গারা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেরও। গুরুদাসপুর হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। ভেঙ্গারায় তারা তৃতীয় স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে গিয়েছে। আর উত্তরপ্রদেশে ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে শনিবার রাতে। ছাত্র সংসদের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতেই এবিভিপি হেরে গিয়েছে।
পঞ্জাবের গুরুদাসপুর হল হিন্দু প্রধান লোকসভা কেন্দ্র। বরাবরই বিজেপির ভিত শক্ত সেখানে। বিনোদ খন্না বিজেপির টিকিটে চার বার জিতেছেন ওই কেন্দ্র থেকে। এপ্রিলে খন্না মারা যান, খালি হয় আসনটি। কিন্তু গুরুদাসপুর ধরে রাখা বিজেপির কাছে মর্যাদার লড়াই ছিল। ছ’মাস আগে পঞ্জাবে যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল, তাতে কংগ্রেস বড় জয় পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু লোকসভা উপনির্বাচনে তার কোনও প্রভাব পড়বে না বলে বিজেপি দাবি করেছিল। মোদী সরকারের ‘সাফল্যে’ ভর করেই গুরুদাসপুর বিজেপি ধরে রাখবে বলে দলের তরফে দাবি করা হয়েছিল। অকালি-বিজেপি জোটের তরফে খোদ সুখবীর সিংহ বাদল (প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী) প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিপুল খরচও করা হয়েছিল নির্বাচনে। তবু বিজেপি প্রার্থী স্বর্ণ সলারিয়া ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ২১৯ ভোটের বিরাট ব্যবধানে হেরে গেলেন। জিতলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুনীল জাখড়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রদেশ কংগ্রেস আরও উজ্জীবিত। মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ থেকে পঞ্জাব মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নভজ্যোৎ সিংহ সিধু— জাখড়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন সকলেই।
গুরুদাসপুরে বিপুল জয়ে উচ্ছ্বসিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুনীল জাখড়। ছবি: পিটিআই।
কেরলেও বড় জয় পেয়েছে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)। ভেঙ্গারা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আইইউএমএল প্রার্থী কে এন এ খাদের পেয়েছেন ৬৫ হাজার ২২৭ ভোট। আর সিপিএম প্রার্থী পি বশির পেয়েছেন ৪১ হাজার ৯১৭ ভোট। এই আসনে আইইউএমএল-এর জয় প্রত্যাশিতই ছিল। অপ্রত্যাশিত যা ছিল, তা হল বিজেপির চতুর্থ স্থান প্রাপ্তি। ভেঙ্গারায় ৮ হাজার ৬৪৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে এসডিপিআই। আর অমিত শাহ যখন নিজে কেরল গিয়ে দলের সংগঠন জোরদার করার চেষ্টা করছেন, তখন মাত্র ৫ হাজার ৭২৮ ভোট পেয়ে বিজেপি চতুর্থ স্থানে।
ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর সমাজবাদী ছাত্র সভার উল্লাস। ছবি: পিটিআই।
ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও বিপর্যয়ের মুখ দেখতে হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদকে (এবিভিপি)। সভাপতি, সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক— চারটি পদেই জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী ছাত্র সভার প্রার্থীরা। শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদটিতে জিততে পেরেছে এবিভিপি। ২০১৫ সালের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সভাপতি পদ ছাড়া বাকি সবক’টি পদেই জয়ী হয়েছিলেন এবিভিপি প্রার্থীরা। কিন্তু এ বার শোচনীয় পরাজয় হল গেরুয়া শিবিরের। মাস ছয়েক আগের বিধানসভা নির্বাচনে যে উত্তরপ্রদেশে অবিশ্বাস্য জয় হয়েছে বিজেপির, সেই উত্তরপ্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়েই এবিভিপির এমন শোচনীয় পরাজয় গেরুয়া শিবিরের পক্ষে নিঃসন্দেহে অস্বস্তির।
আরও পড়ুন: গ্রামে মন দিন নরেন্দ্র মোদী, চায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ
আরও পড়ুন: প্রণব-স্মৃতিতে প্যাঁচে বিজেপি
পঞ্জাব, কেরল বা ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন শুধু নয়, মহারাষ্ট্রের নান্দেড়-বাঘালা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নির্বাচনেও সম্প্রতি শোচনীয় হার হয়েছে বিজেপির। বিপুল জয় পেয়েছে কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রের অন্যত্র অবশ্য বেশিরভাগ পঞ্চায়েত এবং পুরসভাতেই বিজেপির ফল ভাল। কিন্তু পাশের রাজ্য গুজরাতের স্থানীয় স্তরের নির্বাচনগুলিতে আবার মিশ্র ফলাফল। সব মিলিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানা স্তরের নির্বাচনে যে ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মোদী-শাহ জুটির জন্য তা কিন্তু খুব স্বস্তিদায়ক নয়।