নিহত মেজর-পত্নী শৈলজা দ্বিবেদী।
‘শৈলজাকে ফিনিশ করে দিয়েছি’। দিল্লিতে সহকর্মীর স্ত্রীকে খুনের পর বান্ধবীকে ফোন করে নিজেই একথা জানিয়েছিলেন ধৃত মেজর নিখিল হান্ডা। মেজর হান্ডার কল রেকর্ড ঘেঁটে এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর এমনই তথ্য মিলেছে বলে দাবি দিল্লি পুলিশের। রবিবার উত্তরপ্রদেশের মেরঠ থেকে মেজর হান্ডার গ্রেফতারের পরই দিল্লির এই হাই প্রোফাইল খুন কাণ্ডে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে। ধৃত মেজরকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আরও অনেক তথ্যই মিলবে বলে মনে করছেন দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা।
ধৃত মেজর হান্ডার কল রেকর্ডের তথ্য ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের পরই দিল্লির একটি নম্বরে ফোন করেন মেজর নিখিল হান্ডা। সেই সূত্রে পুলিশ দিল্লির প্যাটেল নগরের বাসিন্দা এক মহিলার নাম উঠে আসে। এ নিয়ে ধৃত হান্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই মহিলা মেজর হান্ডার দীর্ঘদিনের বান্ধবী। খুনের পর ফোন করে তাঁকেই মেজর হান্ডা জানান, ‘‘শৈলজাকে ফিনিশ করে দিয়েছি।’’ খুন বা পরিকল্পনার সঙ্গে ওই মহিলাও কোনওভাবে যুক্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত ২৩ জুন শনিবার খুনের পর ধৃত নিখিল হান্ডার পুরো গতিবিধিও পুলিশ জানতে পেরেছে। তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের পর নিজের গাড়ি থেকে রক্তের দাগ ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করেন নিখিল। এরপর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সেনাবাহিনীর বেস হাসপাতালে যান। সেখানেই তাঁর স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের তিনি জানান, ক্যান্টনমেন্টের কাছেই রিজ এলাকায় তাঁর গাড়ির সঙ্গে একটি পশুর ধাক্কা লেগেছে।
আরও পড়ুন: কেন খুন হতে হল এই ‘মিসেস ইন্ডিয়া আর্থ’-এর ফাইনালিস্ট শৈলজাকে?
সেখান থেকে বাড়ি ফিরে বাবাকেও একইভাবে পথ দুর্ঘটনার কথা বলেন নিখিল হান্ডা। এরপর দিল্লির সি আর পার্কের এক কাকার বাড়িতে যান। সেখান থেকে এক আইনজীবীর অফিসেও যান। রাত দশটা নাগাদ তাঁর এক তুতো ভাই দিল্লির আশ্রম এলাকায় পৌঁছে দেন। ওই ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধারও নেন তিনি। এর পর রাতেই চলে যান উত্তরপ্রদেশের মেরঠে। আর সেখান থেকেই পরের দিন রবিবার সকালে গ্রেফতার হন নিখিল হান্ডা। আশ্রম থেকে মেরঠ যাওয়ার রাস্তায় সিসিটিভি-র ফুটেজে ধরা পড়া মেজর হান্ডার ছবিও পেয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে টোল-এর রসিদও। তবে এখনও খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং রক্ত মোছার কাজে ব্যবহার করা টাওয়েলের হদিশ মেলেনি। মেজর হান্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেগুলির সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
গ্রেফতারের পর হান্ডার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল থেকেও প্রচুর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নিখিলের সঙ্গে যে নিহত মেজর-পত্মী শৈলজার প্রতিদিন একাধিকবার ফোন, চ্যাট ও ভিডিও কলে কথা হত, সেই তথ্য মিলেছে। গত তিন মাসেই অন্তত তিন হাজার বার দু’জনের ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটের প্রমাণ মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার হয় শৈলজার মোবাইল ফোন। কিন্তু এখনও সেটির সিমের তথ্য উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই খুন মেজর-পত্নী, দাবি পুলিশের
কিন্তু কীভাবে ধরা পড়লেন মেজর নিখিল হান্ডা?
পুলিশ সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে মৃতা শৈলজার স্বামী মেজর অমিত দ্বিবেদীর দেওয়া তথ্য তদন্তে পুলিশকে বড় সাহায্য করেছে। কারণ শৈলজার নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে নিখিল হান্ডার উপর। পুলিশকেও মেজর দ্বিবেদী জানান, তাঁর স্ত্রীর নিখোঁজ রহস্যের পিছনে অবশ্যই মেজর হান্ডার হাত রয়েছে। এরপরই পুলিশ নিখিল হান্ডার বাড়িতে যায়। কিন্তু ততক্ষণে সেখান থেকে কেটে পড়েছেন নিখিল হান্ডা। তবে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে মেজর হান্ডাকে গ্রেফতার করতে অসুবিধা হয়নি পুলিশের।
খুনের পর বান্ধবীকে জানানো, তথ্যপ্রমাণ নষ্টের চেষ্টা-সহ গোটা ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে তদন্তকারী অফিসাররা একপ্রকার নিশ্চিত, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে মেজর-পত্নীকে। আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য ধৃত মেজর নিখিল হান্ডাকে নিয়ে মেরঠে যাবে পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
২৩ জুন, শনিবার দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাস্তার উপর থেকে উদ্ধার হয় মেজর অমিত দ্বিবেদীর স্ত্রী শৈলজার গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তোলপাড় রাজধানীর নানা মহল।
আরও পড়ুন: ভরদুপুরে রাজধানীর রাস্তায় মেজরের স্ত্রীর গলা কাটা দেহ!