মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে আঘাত নিয়েও কংগ্রেসের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হল।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী গত কাল প্রথমেই একে ‘রাজনৈতিক ভণ্ডামি’ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি সেই অবস্থান থেকেই ফের প্রশ্ন তুলেছেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকলে কেন সিবিআই, এনআইএ বা সিট-এর তদন্ত হচ্ছে না? কিন্তু কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ, অশোক গহলৌতরা সে পথে না-হেঁটে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। লোকসভায় অধীরের সহকর্মী মণীশ তিওয়ারিও মমতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, মমতা এক সময় ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, সকলেই ‘আজকালকার রাজনীতিক’-দের মতো নন। কয়েক জন এখনও রাজনৈতিক সৌজন্যে বিশ্বাস করেন।
মণীশ কংগ্রেসের মধ্যে বিক্ষুব্ধদের গোষ্ঠী জি-২৩-র সদস্য। প্রশ্ন উঠেছে, ‘আজকালকার রাজনীতিক’ বলতে তিনি কাকে ইঙ্গিত করেছেন?
বুধবার বিকেলে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী পায়ে চোট পেলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেউই তাঁর আরোগ্য কামনা করে শুভেচ্ছা জানাননি। একই ভাবে নীরব কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীও। অথচ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত মমতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁদের মত, অভিযুক্তদের শাস্তি হোক। কিন্তু বৃহস্পতিবার অধীর ফের মমতার দিকে অভিযোগ তুলেছেন, “ষড়যন্ত্রের অজুহাত দিয়ে উনি মানুষের সহানুভূতি পেতে চাইছেন। এটা অজুহাত দিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা।” অধীরের প্রশ্ন, “পুলিশ কোথায় ছিল? সিসিটিভি ফুটেজ কোথায়? তা বার হলেই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। ওনার সঙ্গে কোনও পুলিশ ছিল না, বলাটা হাস্যকর।”
কংগ্রেসের অন্দরের দুই ভিন্ন সুরে প্রশ্ন উঠেছে, এআইসিসি কি অধীরের আক্রমণাত্মক সুরকে সমর্থন করছে না? নাকি জাতীয় রাজনীতি বা পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী সমীকরণের কথা মাথায় রেখে এআইসিসি নিজের দরজা খোলা রাখছে?
এই জল্পনার মধ্যেই আজ কংগ্রেসের তরফে স্পিকারকে জানানো হয়েছে, বাজেট অধিবেশনের বাকি সময় পঞ্জাবের সাংসদ ও দলের সচেতক
রভনীত সিংহ বিট্টু লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার দায়িত্ব পালন করবেন। পঞ্জাব কংগ্রেসের তরফে টুইট করে রভনীতকে লোকসভার দলনেতা মনোনীত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছাও জানানো হয়। প্রশ্ন ওঠে, অধীরকে কি সরিয়ে দেওয়া হল? বিভ্রান্তি দূর করতে কংগ্রেস জানায়, দলনেতা অধীর, উপ-দলনেতা গৌরব গগৈ, মুখ্য সচেতক কে সুরেশ—তিন জনেই পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরলের বিধানসভা ভোট নিয়ে আপাতত ব্যস্ত থাকবেন। তাই বিট্টুকে সাময়িক দায়িত্ব। কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, অধীর বাংলার রাজনীতির বাধ্যবাধকতা মেনে মমতাকে নিশানা করছেন। অমরেন্দ্র, গহলৌত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আর এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে কোনও মতভেদ নেই। কিন্তু মতভেদ রয়েছে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন মণীশ তিওয়ারি।
প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় গত কালই টুইট করে মমতাকে ‘দিদি’ সম্বোধন করে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন। সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আপনার সামনে কঠিন লড়াই। আপনিই বিজয়ী হবেন।’ অভিজিতের মন্তব্য তুলে ধরে মণীশের বক্তব্য, “এটাই রাজনৈতিক সৌজন্য। প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর ছেলের জন্য গর্বিত হতেন।” অধীরকে লোকসভার দলনেতা করায় মণীশ ক্ষুব্ধ বলে অনেকেই মনে করেন। প্রশ্ন উঠেছে, মণীশ কি অধীরের সঙ্গে বাংলার বাকি নেতাদের মতভেদ তুলে ধরতে চাইছেন?
মণীশের তাৎপর্যপূর্ণ জবাব, “মমতা যখন থেকে আনন্দ শর্মার সঙ্গে যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তখন থেকে আমি তাঁকে চিনি। সেটা ১৯৮৫ সালের কথা। আমি তখন এনএসইউআই-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। উনি ইউপিএ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন।”