জেএনইউ বিতর্ক

রাহুল, ইয়েচুরির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা

জেএনইউ বিতর্কে এ বার নতুন ঝড়! কানহাইয়া কুমারকে সমর্থন করায় রাহুল গাঁধী, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ ন’জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের হল হায়দরাবাদের সারওরনগর থানায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

জেএনইউ বিতর্কে এ বার নতুন ঝড়! কানহাইয়া কুমারকে সমর্থন করায় রাহুল গাঁধী, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ ন’জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের হল হায়দরাবাদের সারওরনগর থানায়। কংগ্রেস ও শীর্ষস্থানীয় বাম নেতাদের পাশাপাশি সংযুক্ত জনতা দলের সাংসদ কে সি ত্যাগী ও জেএনইউয়ের দুই ছাত্র কানহাইয়া কুমার ও উমর খালিদের বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছে হায়দরাবাদের পুলিশ।

Advertisement

অবশ্য হায়দরাবাদ পুলিশের দাবি, জনৈক আইনজীবী জনার্দন গৌড়ের অভিযোগকে নিয়ে আদালতের নির্দেশ মেনেই তারা এই পদক্ষেপ করেছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় আদালতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গৌড় অভিযোগ করেন, দিল্লি পুলিশ কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ করেছে— এটা জানা সত্ত্বেও রাহুল ও অন্য নেতারা জেএনইউয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা দেশদ্রোহীদের সমর্থন করেছেন। রাহুলদের সেই কাজ আসলে দেশদ্রোহেরই নামান্তর। ফলে যারা দেশদ্রোহ করেছে এবং যারা সেই কাজ সমর্থন করেছে— দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই একই ভাবে মামলা করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিতে আদালতে আর্জি জানান গৌড়। সারওরনগরের পুলিশ ইনস্পেক্টর এস লিঙ্গাইয়া জানিয়েছেন, আদালতের আদেশের ভিত্তিতেই গত কাল ন’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে রাহুল গাঁধী, অরবিন্দ কেজরীবাল, সীতারাম ইয়েচুরি, কানহাইয়া কুমারদের বিরুদ্ধে। ৪ মার্চ এই মামলার পরের শুনানি। পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে আইনি পরামর্শও নিচ্ছে তারা।

দিল্লিতে কংগ্রেস এই ঘটনার তুমুল সমালোচনা করেছে। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা অভিযোগ এনেছেন, মোদী সরকারের দলিত ও গরিব-বিরোধী নীতি নিয়ে যাঁরাই সমালোচনা করবেন, তাঁদের মুখ বন্ধ করতে তৎপর হবে বিজেপি ও
তাদের শরিকরা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রোহিত ভেমুলা থেকে রাহুল গাঁধী— মোদী সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই তাঁকে দেশবিরোধী বলা হবে।’’

Advertisement

আর যাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, জনতা দলের সেই নেতা, কে সি ত্যাগী জানাচ্ছেন, দেশদ্রোহের এই সব অভিযোগ তাঁকে জরুরি অবস্থার দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সে দিন রামমনোহর লোহিয়া, চরণ সিংহ, অটলবিহারী বাজপেয়ীদের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগই আনা হয়েছিল। বিরোধী নেতাদের এ সব মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, আগামিকাল বাজেটের দিনেও সংসদের অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে উঠতে চলেছে। এর মধ্যেই বিশিষ্ট ইতিহাসহিদ রোমিলা থাপার মন্তব্য করেছেন, গোটা দেশে জেএনইউয়ের প্রতি মানুষের এতটাই সমর্থন রয়েছে যে সাম্প্রতিক বিতর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হবে না।

জেএনইউ নিয়ে চাপানউতোরে আজ দিনভর দিল্লিতেও রাজনীতির পারদ ছিল চড়া। প্রথমে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু অভিযোগ আনেন, সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্কে কংগ্রেস সব সময়েই নরম মনোভাব নিয়ে চলে। বরং জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিতে অভ্যস্ত তারা। বেঙ্কাইয়ার ক্ষোভ, এই ভাবনা নিয়েই সংসদে কংগ্রেস বিভিন্ন বিল আটকাতে তৎপর হয়েছে। পরে বিজেপিকে পাল্টা নিশানা করেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল। সংবাদমাধ্যমের খবর টেনে এনে তাঁর দাবি, জেএনইউয়ে সে দিন যারা দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছিল, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। কারণ, জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে সরকার গড়ার কথা ভাবছে বিজেপি। আর এদের গ্রেফতার করা হলে নাকি মেহবুবা মুফতি চটে যেতে পারেন। বিজেপিকে নিশানা করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ওরা যদি এমন রাজনীতি করতে থাকে, আর গ্রেফতারি আটকানো হয়, তা হলে ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না।’’

আগামিকাল কানহাইয়া কুমারের জামিনের মামলা দিল্লির আদালতে উঠবে। জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠনের সহসভাপতি শীলা রশিদ সোরার মন্তব্য, ‘‘আশা করি কাল কানহাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসতে পারবে।’’ জেএনইউয়ে এখন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার সমর্থনে অসংখ্য পোস্টার পড়েছে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিতের আত্মহত্যা নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন স্মৃতি ইরানি ও বন্দারু দত্তাত্রেয়র মতো নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীরা। আর তার পরপরই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশবিরোধী স্লোগান নিয়ে বিতর্ক এখন যে মাত্রা নিয়েছে, তাতেও বিরোধীদের নিশানায় মোদী সরকার এবং মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। জেএনইউ বিতর্কে স্মৃতির মন্তব্য নিয়ে সংসদ উত্তাল হয়েছে একাধিক বার। আর এই দু’টি বিষয়কে মেলানোরও একটি চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘রোহিত কা জেএনইউ’ পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোহিতের পরিবারের সদস্যরা আজ জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের চেয়ারম্যান পি এল পুনিয়ার সঙ্গে দেখা করেও তাঁদের অভিযোগ জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement