প্যারিসে হামলার পর দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তা আরও আটোসাঁটো করা হল। পর্যালোচনা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। বিশেষ করে, তাঁর বিদেশ সফরের সময়।
প্যারিসে ধারাবাহিক সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার পরেই আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে মন্ত্রক ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, প্যারিসের ঘটনার প্রেক্ষিতে এ দেশেও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি দূতাবাস, কনসুলেট, বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, ধর্মস্থান, জনবহুল এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিকেও। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ মাসের শেষেই প্যারিসে জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের হাজির থাকার কথা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফর করছেন।প্রধানমন্ত্রী সফর শেষ করে দেশে ফিরলেই এই বিষয়টি নিয়ে আরও সবিস্তারে আলোচনা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, বিদেশের মাটিতে প্রধানমন্ত্রী লাগাতার সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরব হচ্ছেন। এমনকী, গতকালও তিনি লন্ডনে বলেছিলেন, যারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে, তাদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। লন্ডন ও তুরস্ক সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে ফের মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফরে যাবেন।ফলে, তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি এ দেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সন্ত্রাসবাদী গতিবিধি এখনও সে ভাবে দানা না বাধলেও ভারত তাদের অনেক দিনেরই নিশানা। আর কাকতালীয় হলেও গতকাল রাতে প্যারিসে যে ভাবে হামলা হয়েছে, তার সঙ্গে ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার মিল রয়েছে। তবে সেই হামলা চালিয়েছিল পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা। ইন্ডিয়ান মুজাহিদ্দিনও এ দেশে সক্রিয়। প্যারিসে সন্ত্রাসের পর এই সংগঠনগুলি যাতে এ দেশেও কোনও হামলার ছক না কষে, তার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
আজ সকালের বৈঠকের পরেই দিল্লিতে ফরাসি দূতাবাসের সামনে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, রেল স্টেশন ও মেট্রো স্টেশনগুলিতেও দেখা যায় অন্য দিনের তুলনায় বাড়তি নজরদারি। পুলিশ কুকুরও সামানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র বলছে, এখনও পর্যন্ত এ দেশে আইএস-এর সন্ত্রাসবাদী গতিবিধি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসেনি। তবু এই সংগঠনের প্রতি সহমর্মী হতে অনেককে দেখা গিয়েছে। ভারত থেকে গিয়ে আইএস-এর কার্যকলাপে যোগ দেওয়ার খবরও এসেছে। মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, কর্নাটকে এমন কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে কয়েক জন। কাশ্মীরেও আইএস-এর পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। তবে ভারত সরকার আপাতত এই গতিবিধির উপরে কড়া নজর রেখেছে। আপাতত এদের চিহ্নিত করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার কৌশলই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য সংগঠনের সন্ত্রাসবাদীরা এ দেশে সক্রিয়। বড় হামলার ছকও তাদের রয়েছে। সময়ে সময়ে সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলিকেও সতর্ক করা হচ্ছে।
মুম্বইয়ের মতো বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর রাজ্যগুলির সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদানের ব্যবস্থা কার্যকর করতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্র।
কিন্তু নজরদারির ফাঁক গলে যখন প্যারিসেও এত বড় সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটে গেল, সেই সময় সবথেকে বড় যে প্রশ্নটি উঠছে, তা হল- এই ধরনের হামলা মোকাবিলার জন্য ভারত কী প্রস্তুত? প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটে গেলে তার মোকাবিলার জন্য ভারত প্রস্তুত। কিন্তু সেই ঘটনা রোখার জন্য পর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে যথেষ্টই।’’