পরিস্থিতির তদারকিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর।—নিজস্ব চিত্র
একটা সঙ্কেত! শুধু একটা সঙ্কেত! তারই খোঁজে এখন সাগর তোলপাড় করছে নৌসেনা, বায়ুসেনা এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ, বিমান।
বেশির ভাগ বিমানেই আপৎকালীন সঙ্কেত দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র বা ‘বিকন’ থাকে। বিমান বিপদে পড়ে নষ্ট হয়ে গেলেও সেই ‘বিকন’ সঙ্কেত দেয়। সেই সঙ্কেত ধরতে পারলে দুর্গম এলাকা থেকেও বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব। চেন্নাই থেকে পোর্ট ব্লেয়ার পাড়ি দেওয়ার পথে উধাও হয়ে যাওয়া বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমানের সেই বিকনের খোঁজে শনিবার দিনভর বঙ্গোপসাগর তোলপাড় করেছে নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর ১৯টি জাহাজ! আকাশে চক্কর কেটেছে পাঁচটি বিমান। এমনকী জলের তলাতেও ঘুরে বেড়াচ্ছে নৌসেনার ডুবোজাহাজ। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত কিছুই মেলেনি। একটি সূত্রের খবর, নিখোঁজ বিমানের হদিস পেতে প্রয়োজনে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরোর কাছে উপগ্রহ-চিত্রের সাহায্য চাওয়া হবে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় চেন্নাইয়ের বায়ুসেনা ঘাঁটি তাম্বরম থেকে দুই চালক-সহ ২৯ জনকে নিয়ে উড়েছিল এএন-৩২ বিমানটি। ৮টা ৪৬ মিনিটে পাইলটের সঙ্গে এটিসি-র শেষ বারের মতো যোগাযোগ করা হয়েছিল। সকাল ৯টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত চেন্নাই এটিসি-র রে়ডারে তাকে দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকেই উধাও বিমানটি। পাইলটের তরফে কোনও বিপদবার্তা বা ‘মে-ডে কল’ আসেনি। উধাও হয়ে যাওয়ার ৪০ ঘণ্টা পরেও বিমান বা যাত্রীদের খোঁজ না মেলায় নৌসেনার এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘ওই বিমান এবং তার যাত্রীরা নিরাপদে রয়েছেন, এমন আশা আর নেই বললেই চলে।’’ বায়ুসেনা সূত্রের খবর, ভরা বর্ষায় সাগর এখন উত্তাল। ফলে বিমানটি সাগরে ভেঙে পড়লে ঢেউয়ের ধাক্কায় তা আরও দূরে সরে যেতে পারে। তাই এ দিন
তল্লাশি অভিযান এলাকার পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
বস্তুত বর্ষার উত্তাল সাগরে বিমান ভেঙে পড়ার পর তা কত দূর ছড়িয়ে যেতে পারে সে অভিজ্ঞতা গত বছরই হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। গত বছরের ৮ জুন চেন্নাই উপকূলেই উধাও হয়েছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি ডর্নিয়ের বিমান। এক মাসের বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালানোর পরে সাগরের তলদেশ থেকে পাইলটদের দেহাবশেষ মিলেছিল। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, যেখানে ওই ডর্নিয়েরের শেষ অবস্থান ছিল তার থেকে অনেকটা দূরেই দেহাবশেষ মিলেছিল। আর মালয়েশিয়া বিমানসংস্থার উড়ান এমএইচ-৩৭০-এর খোঁজ তো এখনও মেলেনি। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ দক্ষিণ চিন সাগরের উপর থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এমএইচ-৩৭০
এখনও রহস্য।
এ দিন তল্লাশি অভিযান খতিয়ে দেখতে চেন্নাই হাজির হয়েছিলেন খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। প্রথমে নৌসেনার বিমানঘাঁটি আইএনএস রাজৌলিতে যান তিনি। সেখানে নৌসেনা ও বায়ুসেনা অফিসারেরা তাঁকে গোটা ঘটনা বিস্তারিত ভাবে জানান। তার পর নৌসেনার একটি পি৮-আই বিমানে চেপে আকাশপথে তল্লাশির এলাকাও ঘুরে দেখেন তিনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, প্রয়োজনে আরও জাহাজ ও বিমানকে তল্লাশিতে নামানোর নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
বায়ুসেনা ও নৌবাহিনী সূত্রের খবর, ১৯টি জাহাজ তো রয়েইছে, তার উপরে যে তিনটি বিমানকে নামানো হয়েছে সেগুলি এই ধরনের কাজের অত্যন্ত উপযোগী। যেমন বায়ুসেনার পাঠানো দু’টি সি১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিমানে ইনফ্রা-রেড সেন্সর রয়েছে। ফলে অন্ধকারে বা জলের গভীরেও কোনও সূত্র ধরতে পারবে সে।
নৌসেনার পাঠানো পি৮-আই বিমানে রয়েছে ‘সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডার’। নৌসেনার অফিসারেরা জানান, এই বিমানের ক্যামেরা এবং রেডার অত্যন্ত শক্তিশালী। শুধু তাই নয়, ইচ্ছে মতো ‘জুম’ করে বহু দূরের জিনিস বিমানের ভিতরে থাকা ছোট বস্তুকেও বড় করে দেখা যায়। এই ধরনের রেডার কৃত্রিম উপগ্রহেও বসানো থাকে বলে নৌসেনা সূত্রের খবর।
নিখোঁজ বিমানেই সওয়ার ছিলেন বাগডোগরার মুকেশ ঠাকুর। শনিবার বায়ুসেনার সদর থেকে ফোন করে তাঁর পরিবারকে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ এএন ৩২ বিমানে ছিলেন মুকেশবাবু। সপ্তাহখানেকও কাটেনি ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বায়ু সেনার ওই জওয়ান। বাড়ি জ্যোতি নগরে। তাঁর ৫ বছরের ছেলে রয়েছে। উৎকন্ঠায় তাঁর পরিবার ও পড়শিরা।