Bilkis Bano

‘আজ বিলকিস, আগামী কাল?’ ১১ ধর্ষক এবং খুনির মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট

গত ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দেবগড় বারিয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। পরে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ আবেদনে সাড়া দেয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ২১:২৮
Share:

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

গুজরাতে দাঙ্গাপর্বে বিলকিস বানো মামলায় গণধর্ষণ এবং খুনের অপরাধী ১১ জনের সাজার মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিভি নাগরত্নের বেঞ্চ কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকারকে বিঁধে বলেছে, ‘‘আজ বিলকিস বানোর মামলার অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আগামিকাল কারা মুক্তি পাবে?’’

Advertisement

পাশাপাশি, দুই বিচারপতির বেঞ্চ বিলকিস মামলার অপরাধীদের সাজার মেয়াদ শেষের আগে মুক্তি প্রসঙ্গে গুজরাত সরকারকে বলেছে— ‘‘মুক্তি দেওয়ার আগে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করা প্রয়োজন ছিল।’’ গত ২৭ মার্চ এই মামলার শুনানিতে ২ বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্র, গুজরাত সরকারকে ধর্ষকদের মুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু বিজেপি পরিচালিত ওই দুই সরকার মঙ্গলবার তা পেশ করেনি। মেয়াদ শেষের আগে ১১ দাগি অপরাধীর মুক্তি সংক্রান্ত নথি পেশের বিষয়ে দুই সরকারের ‘অনীহার’ কথা আইনজীবী মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শীর্ষ আদালতকে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করে। এর পরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় শীর্ষ আদালত।

Advertisement

মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘‘যেমন আপেলের সঙ্গে কমলালেবুর তুলনা হয় না, তেমনই ৩০২ ধারার সাধারণ খুনের মামলার সঙ্গে এখানে নির্যাতিতার প্রতি অত্যাচার এবং গণহত্যার অপরাধের তুলনা চলতে পারে না।’’

বস্তুত, ১১ জনের মুক্তির পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক বাধে। বিতর্কের মধ্যেই গুজরাত সরকার জানায় যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক ও খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর ৩ বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। গত ১৫ অগস্ট ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

গুজরাত সরকার ১১ জন ধর্ষকের জেলের ভিতরে ‘ভাল আচরণের’ দাবি করলেও সরকারি তথ্য ‘অন্য কথা’ বলছে বলে অভিযোগ। ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement