সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ফল হয়নি। কিন্তু শিবরাজ সিংহ চৌহানের বিরুদ্ধে ওঠা ব্যপম দুর্নীতি নিয়ে মাঠে নেমে প্রথম সাফল্য পেল কংগ্রেস।
মধ্যপ্রদেশ সরকার নিজেই অনুরোধ করায় আজ সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তূর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ব্যপম দুর্নীতির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে দেরি করেনি। শুধু এই দুর্নীতিই নয়, এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুরও তদন্ত করবে সিবিআই। সোমবার সিবিআইকে এই দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। আজ প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আমরা আর মৃতের সংখ্যা বাড়তে দেব না।’’ তবে সুপ্রিম কোর্ট এই তদন্তে নজরদারি করবে কি না, তার ফয়সালা আজ হয়নি। এ বিষয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইকে তাদের অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই আজ নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেছেন রাহুল গাঁধী। প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী এখনও কেন মৌনী? দুর্নীতির অভিযোগের পরেও কেন বসুন্ধরা বা শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসিয়ে রেখেছেন তিনি?
রাহুল বলেন, ‘‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী এক বার বলেছিলেন— না খাউঙ্গা, অওর না খানে দুঙ্গা (নিজেও খাব না, কাউকে খেতেও দেব না)। আমাদের সকলের সে কথা মনে আছে। তবে আপনি কেন রাজস্থানে দুর্নীতি হতে দিচ্ছেন? কবে ললিত মোদীকে ফিরিয়ে আনা হবে? আপনি কেন শিবরাজ সিংহ চৌহানকে খেতে দিচ্ছেন?’’
রাহুলের কথাতেই স্পষ্ট, ব্যপম-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হওয়ায় এ বার রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছরে কংগ্রেসের হাতেতেমন কোনও হাতিয়ার আসেনি। সুষমা স্বরাজের বিরুদ্ধে ললিত মোদীকে সাহায্য করার অভিযোগ ওঠায় প্রথম সুযোগ মেলে। একই সঙ্গে বসুন্ধরা রাজেও নিশানায় চলে আসেন। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের ইস্তফা না দেওয়ার বিষয়ে অনড় থাকায় চাপ হালকা হওয়ার আশঙ্কা করছিল কংগ্রেস। ব্যপম-কাণ্ডে শিবরাজের নাম জড়ানোয় মাঠে নামে কংগ্রেস। যার পুরোভাগে ছিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ। ওই দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলায় সওয়াল করতে আজ সুপ্রিম কোর্টে হাজির ছিলেন কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং বিবেক টাংখা। ব্যপম-কেলেঙ্কারি ফাঁস করে প্রচারের আলোয় চলে আসা আশিস চতুর্বেদী, আনন্দ রাই ও প্রশান্ত পাণ্ডে এই মামলা করেছিলেন। পরে দিগ্বিজয় নিজেও মামলা করেন। তিন পোড় খাওয়া আইনজীবীকে মাঠে নামামোর পাশাপাশি দিগ্বিজয় নিজেও এ দিন এজলাসে হাজির হয়েছিলেন।
বিজেপি অবশ্য মনে করছে, সর্বোচ্চ আদালত ব্যপম কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে কংগ্রেসের আর কিছু বলার থাকে না। বিজেপির মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী এখন এত কথা বলছেন। ইউপিএ আমলে এর দশ শতাংশ বললে এত দুর্নীতি হতো না। রাহুল আসলে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’
চাপের মুখে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দু’দিন আগে ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকার নিজেই সিবিআই তদন্তের অনুরোধ জানাবে। কিন্তু রাজ্যপাল রামনরেশ যাদবের নামও ওই দুর্নীতিতে জড়িয়েছে বলে তাঁকে সরানোর আর্জি জানিয়েও মামলা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। যদিও ইউপিএ আমলেই রামনরেশকে মধ্যপ্রদেশের রাজভবনে বসানো হয়েছিল, কিন্তু শিবরাজকে চাপে ফেলতে এ বিষয়েও জোর সওয়াল করেন সিব্বলরা। কংগ্রেস এখন ভাবছে, রামনরেশ রাজ্যপালের পদ থেকে সরলে তিনিও শিবরাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন। কারণ তাঁর ও তাঁর ছেলে শৈলেশ, দু’জনেরই নাম জড়িয়েছে দুর্নীতিতে। রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুও হয়েছে শৈলেশের।
এত দিন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারের তৈরি এসআইটি ও পুলিশের এসটিএফ ব্যপম-কাণ্ডের তদন্ত করছিল। এর পর মামলা আসে সুপ্রিম কোর্টে। একের পর এক রহস্য মৃত্যুতে চাপে পড়ে শিবরাজের সরকার হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের অনুরোধ করে। কিন্তু হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টই এই সিদ্ধান্ত নেবে। যা দেখে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা মন্তব্য করেছেন, ‘‘হাইকোর্ট হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে। সিবিআই তদন্ত নিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টে বল ঠেলে দিচ্ছে।’’ ব্যপম-দুর্নীতিতে হাইকোর্টের বিচারপতিদের আত্মীয় স্বজনদেরও বেসরকারি মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তার শুনানি হবে।
ব্যপম-দুর্নীতিতে রাজ্যপাল রামনরেশ যাদবের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। কিন্তু হাইকোর্ট এফআইআর বাতিল করে দেয়। আজ আদালতে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিব্বল। যুক্তি দেন, রাজ্যপালের রক্ষাকবচ রয়েছে বলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা না-হতে পারে। কিন্তু এফআইআর কেন করা যাবে না? এ বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে বক্তব্য জানতে চেয়ে কেন্দ্র, রাজ্য ও রাজ্যপালকে নোটিস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কংগ্রেসের পরিকল্পনা হল, সিবিআই তদন্তকে সামনে রেখে বিজেপি নেতৃত্বের উপর আরও চাপ বাড়ানো। শিবরাজকে কেন সরানো হবে না, সেই দাবি তুলে নরেন্দ্র মোদীর উপরে চাপ বাড়াবে কংগ্রেস। একই সঙ্গে সিবিআই তদন্তে ঢিলেমি দেখা গেলে তা নিয়েও নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করা হবে। আজ রাহুল সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের পর বিজেপি সত্যিই রেহাই পায় কি না, সেটাই এখন দেখার।